নওগাঁয় মোট সংক্রমণের ৭৬ শতাংশ জুনে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নওগাঁয় করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়ছে। কেবল চলতি জুন মাসেই মোট ৩১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা মোট আক্রান্তের ৭৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়াল ৪১৭ জনে।

আজ রোববার দুপুরে নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন মোনজের-এ মুর্শেদ নতুন আক্রান্তের এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, জেলায় প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় গত ২৩ এপ্রিল। এরপর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছুঁতে সময় লাগে ৩৯ দিন। কিন্তু পরের ১৩ দিনেই রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এরপর ১২ দিনে আরও ১০০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরের ১০০ রোগী শনাক্ত হতে সময় লাগল মাত্র দুই দিন।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও জানা যায়, ২৩ এপ্রিল প্রথম রোগী শনাক্তের পর ৩১ মে পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩৮ দিনে রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ জনে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট রোগী ৪১৭ জন। এর মধ্যে আজ রোববার পর্যন্ত চলতি মাসের ২৮ দিনে ৩১৯ জনের শনাক্ত হয়েছে, যা মোট শনাক্তের ৭৬ শতাংশ। মোট সুস্থ হয়েছেন ২১৩ জন। মারা গেছেন পাঁচজন।

নতুন শনাক্ত ৩৩ জনের মধ্যে নওগাঁ পুলিশ লাইনসে কর্মরত তিন পুলিশ সদস্য, নওগাঁ সদর হাসপাতালের দুজন নার্স এবং আত্রাই উপজেলার একজন স্যানিটারি পরিদর্শক রয়েছেন। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬ জন, মহাদেবপুরে ৬ জন, বদলগাছিতে ৮ জন এবং আত্রাই উপজেলায় ৩ জন রয়েছেন।

ডেপুটি সিভিল সার্জন মোনজের-এ মুর্শেদ জানান, আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশের শরীরেই তেমন কোনো জটিল উপসর্গ নেই। তাঁদের সবাইকে বাড়িতে আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সব ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক দিয়ে জেলা সদর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪১৭ জনের মধ্যে ১৭২ জনই সদর উপজেলার। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৪১ শতাংশই জেলা সদরের বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের দিক দিয়ে নওগাঁ জেলা খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ জেলায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে খুবই কম। পরীক্ষার অভাবে অনেকেই নিজের সংক্রমণ বুঝতে পারছেন না। এ ছাড়া পরীক্ষার জন্য যেসব নমুনা বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে, ওই সব নমুনা পরীক্ষার ফল আসতে সময় লাগছে ৭ থেকে ১২ দিন। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

নওগাঁয় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য আন্দোলন করে আসছে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ। সংগঠনটির সভাপতি ডি এম আবদুল বারী বলেন, নওগাঁয় একটি পিসিআর ল্যাব না থাকায় নমুনা দিয়ে ফলাফলের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতি ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ লাভ করবে। বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে নওগাঁয় দ্রুত একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন।

পিসিআর ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নওগাঁয় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। এই এলাকার সাংসদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও এ ব্যাপারে তদবির করছেন। মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এক-দেড় মাসের মধ্যে দেশে আরও দুটি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে নওগাঁ জেলা অগ্রাধিকার পাবে।’