'এই ভিড়োত মুকোত মাচ পরিয়াও যা, না পরিয়াও তা'

বদরগঞ্জ পৌরবাজারের থানা সড়কে অবাধে মানুষের চলাচল ও কেনাকাটা চলছে। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। ছবি: আলতাফ হোসেন
বদরগঞ্জ পৌরবাজারের থানা সড়কে অবাধে মানুষের চলাচল ও কেনাকাটা চলছে। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। ছবি: আলতাফ হোসেন

করোনা পরিস্থিতিতে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছে, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকবে এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে যাবে না।

তবে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ বিধিনিষেধ পালনের কোনো তাগিদ দেখা যায়নি মানুষের মধ্যে। নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে উপজেলায় ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ কর্মসূচি চালুর নির্দেশনাসহ প্রচার চালালেও অধিকাংশ মানুষ তা মানছেন না।

উপজেলার হাটবাজারে সামাজিক দূরত্ব না মেনে গা–ঘেঁষাঘেঁষি করে চলছে কেনাকাটা। রাতেও লোকজন চলছে অবাধে। তাঁদের সবার মুখে মাস্কও নেই। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে একজনের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘এই ভিড়োত মুকোত মাচ পরিয়াও যা, না পরিয়াও তা।’ অর্থাৎ এই ভিড়ে মাস্ক পরলেও যা, না পরলেও তা।

এখন পর্যন্ত উপজেলায় ২১ জন কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নাজমুল হুসাইন জানান, উপজেলায় গতকাল রোববার পর্যন্ত সংক্রমিত ২১ জনের মধ্যে ১৬ জন সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন পাঁচজন। কেউ মারা যাননি।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দোকানপাট খোলা রাখার ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখতে বলা হয়েছে। অন্য সময় দোকানপাট বন্ধ থাকবে। আর রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে।

তবে গত সাত দিন উপজেলার সাতটি হাটবাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের আগে দোকানপাট খোলা হচ্ছে এবং পরে বন্ধ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটার পরে পৌরবাজারের দোকানপাট বন্ধ করা হয়। আর গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের দোকানপাট রাত পর্যন্ত খুলে রাখা হচ্ছে। সকাল ১০টার পরিবর্তে সকাল ৬টার পরই দোকানপাট খোলা হচ্ছে। হাটবাজারে রাতেও লোকজন অবাধে চলাফেরা করছেন।

উপজেলায় মোট ৪০টি বাজার রয়েছে। এর মধ্যে সবজি, মাছ, মাংস ও পশুর বাজারে প্রচণ্ড ভিড়। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বালাই নেই এসব বাজারে। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়াই গা–ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটা করছেন। অথচ সামাজিক দূরত্ব মেনে কেনাকাটা করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বদরগঞ্জ পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গরুর ক্রেতা–বিক্রেতাদের অধিকাংশের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না।

পশু বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার, দেখেন মানুষের কত ভিড়। এই ভিড়োত মুকোত (মুখে) মাচ (মাস্ক) পরিয়াও যা, না পরিয়াও তা।’

উপজেলার ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই সময়ে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন সবজি, মাছ, মাংসের দোকানগুলো বাজার থেকে পাশের ফাঁকা মাঠে নিয়ে যাওয়া উচিত। তাহলে এমনিতেই ভিড় কম হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হবে। হাটবাজারের ভেতরে জায়গা–সংকটে এসব দোকানপাট ঘিঞ্জি করে বসানো রয়েছে। বাজার করতে গেলে সেখানে ভিড় জমে যায়। এ কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে হাটবাজারে কেনাকাটা করা সম্ভব হয় না।’

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘বিকেল চারটার পরই পুলিশ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু তার আগে সামাজিক দূরত্ব মেনে কেনাকাটা করতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রতিরোধের কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেকটা নাজেহাল হয়ে পড়েছি। মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়।’

এ ব্যাপারে ইউএনও মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা বলতে আজ সোমবার সকালে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।