করোনায় জুয়া, মাদক বৃদ্ধির অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর অভিযোগ করেছেন, করোনার সময় গত তিন মাসে উপজেলায় মাদক, জুয়া ও কাউন্টার (মিথ্যা) মামলা দায়ের বেড়ে গেছে। এ জন্য তিনি তিন মাস আগে সরাইল থানায় যোগদান করা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদকে দায়ী করেছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ওসিকে প্রত্যাহারের সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আল্টিমেটাম দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তিনি এ অভিযোগ তোলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এস এম মোসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্য জনপ্রতিনিধিরাও একই অভিযোগ করেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম, সরাইল সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজীব আহমেদ, অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, পাকশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম, আবদুল জব্বার বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উপজেলার সর্বত্র মাদক সেবন ও ব্যবসার প্রসার ঘটছে। মাদক সেবন ও ব্যবসা আগে কিছুটা গোপনে হলেও এখন প্রকাশ্যে হচ্ছে। অনেকেই এখন নতুন করে মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে সবাই ভয়ের মধ্যে আছেন।

শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজীব আহমেদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে সন্ধ্যার পর এখন প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসে। কয়েক মাস ধরে মাদকবিরোধী কোনো অভিযান হচ্ছে না। ফলে নির্ভয়ে ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা করছে। মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে।’

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম বলেন, ‘কয়েকজন দালাল থানা নিয়ন্ত্রণ করে, থানা চলে দালালের মাধ্যমে। দালালের কথায় ওসি আসামি ধরে-ছাড়ে।’ তিনি বলেন, ‘ভালো লোকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মামলা দিতে গেলে নথিভুক্ত হয় না। আর মিথ্যা মামলা হলে নথিভুক্ত হতে সময় লাগে না।’

সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘এখানে তিন মাস আগেও জুয়া ছিল না। মাদক ব্যবসাও বন্ধ ছিল। গত দুই বছরে একটি কাউন্টার (মিথ্যা) মামলা হয়নি। এখন সরাইল উপজেলায় মাদকের আনাগোনা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। উপজেলা সদরের প্রাথবাজার, সৈয়দটুলা ও অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইলে প্রকাশ্যে জুয়ার আসর বসে। এসব স্পটে রাত ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত আধুনিক জুয়ার আসর বসে। এর মধ্যে শুধু প্রাথবাজার থেকে প্রতি রাতে থানাকে তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়।’ এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এভাবে দেশ চলতে পারে না। আর এক মাস দেখব। এরপর পরিবর্তন না হলে ওসিকে প্রত্যাহারের জন্য যা করতে হয়, তা–ই করব।’

জানতে চাইলে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়তই মাদক ব্যবসায়ীদের আটক ও মাদকদ্রব্য জব্দ করে আসছি। জুয়া ও মাদকের ব্যাপারে আমাদের কোনো ছাড় নেই। এ ছাড়া এখানে কোনো কাউন্টার বা মিথ্যা মামলা নেওয়া হয় না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম মোসা বলছেন, জুয়ার আর মাদকের সঙ্গে যে–ই যুক্ত হবে, তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।