পূর্ব রাজাবাজারে এরপর কি? ওয়ারিতে লকডাউন আসছে

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি
ওয়ারির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের যেসব এলাকায় লকডাউন হবে তার মধ্যে বাইরের রোডগুলো হলো টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা সিলেট হাওইয়ের জয়কালি মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন এবং ভেতরের রোডগুলো হলো লারমিনি স্ট্রিট, হরী স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‍্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট।

পরীক্ষামূলকভাবে চলা রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউনের ২১তম দিন আগামী মঙ্গলবার রাতে শেষ হচ্ছে। তবে এরপর এলাকাটিতে কী হবে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের কার্যালয়। এদিকে পূর্ব রাজাবাজারের পর ওয়ারীর আটটি সড়ক লকডাউন করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এখনো দুদিনে পরীক্ষার তথ্য বাকি আছে। সেই তথ্য পাওয়ার পর বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত হবে, তারপর কী করা হবে। তাহলে কাল এখানে লকডাউন শেষ হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, না–ও হতে পারে, বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বলা যাবে এটা (লকডাউন) আরও বাড়ানো দরকার কি না অথবা শেষ করা যাবে কি না। এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউনের পর এবার ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারী এলাকায় লকডাউনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ওয়ারীতে ‘রেড জোন’ বাস্তবায়নের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আটটি রোডে এই লকডাউন হবে। ওয়ারীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের যেসব এলাকায় লকডাউন হবে, তার মধ্যে বাইরের রোডগুলো হলো টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা–সিলেট হাইওয়ের জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন এবং ভেতরের রোডগুলো হলো লারমিনি স্ট্রিট, হরী স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‍্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ মো. ইমদাদুল হক এই চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, এখন সভা করে যত দ্রুত সম্ভব এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে তাঁদের প্রস্তুতিও আছে। তবে লকডাউন শুরু ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।

এর আগে রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ–সংক্রান্ত চিঠি স্থানীয় সরকার বিভাগে যায়। তারও আগে গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানিয়েছিলেন, ঢাকার মহানগরীর ওয়ারীর নির্ধারিত এলাকা চিহ্নিত করে, সেখানে পরীক্ষামূলক রেড জোন বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে।


পূর্ব রাজাবাজারের বিষয়ে নির্দেশনার অপেক্ষা
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন বা লাল (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ), হলুদ (মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ) ও সবুজ (নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ) এলাকায় ভাগ করে ভিন্নমাত্রায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ৯ জুন দিবাগত রাত অর্থাৎ ১০ জুন প্রথম প্রহর থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন শুরু হয়, যা কাল ২১ দিন পূর্ণ হবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এখানে ২১ দিনই লকডাউনের কথা। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়।

তথ্যসংক্রান্ত কাজে যুক্ত স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কর্মী মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লকডাউন শুরুর পর স্থানীয় নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থাপিত নমুনা সংগ্রহ বুথে এ পর্যন্ত মোট ৩০৭ জন নমুনা দিয়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জুন পর্যন্ত দেওয়া নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তাতে মোট ৫৫ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জুন ১০ জন নমুনা দিয়ে শনাক্ত হন দুজন এবং ২৭ জুন আটজন নমুনা দিয়ে শনাক্ত হন একজন। এ ছাড়া এর আগে যাঁরা শনাক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগের শারীরিক অবস্থা ভালো। তবে পরবর্তী ব্যবস্থাটি কী হবে, সে বিষয়ে তাঁরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নির্দেশনা পাননি।
লকডাউন শুরুর সময় এই এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ছিলেন ৩১ জন। করোনায় একজন মারা গেছেন। এখানে মোট ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষ বাস করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লকডাউন বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত একজন প্রথম আলোকে বলেন, এখন স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত হবে এলাকাটির যেসব বাড়িতে করোনায় আক্রান্ত রোগী আছেন, শুধু সেই বাড়িগুলোকে রোগী আক্রান্ত হওয়ার দিন থেকে ১৪ দিনের জন্য লকডাউন করে রাখা, যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। আর অন্য এলাকাগুলোতেও চলাচলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখা। না হলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যাবে।