বাড়িতে চিকিৎসায় 'ইডক্টরস'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বৃদ্ধ বাবার শারীরিক জটিলতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন রতন কুমার গণপতি। করোনাভাইরাসের এই সময়ে হাসপাতালে যাওয়া বিরাট ঝক্কির কাজ। তাই ফেসবুকভিত্তিক চিকিৎসাসেবার গ্রুপ ‘ইডক্টরসের’ (eDoctors) শরণাপন্ন হন তিনি। বাবার শারীরিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে গ্রুপে একটি পোস্ট দেন রতন। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। সেই চিকিৎসকের দেওয়া চিকিৎসা পরামর্শ অনুযায়ী রতন কুমারের বাবা এখন অনেকটাই সুস্থ।

>এই সময়ে মানুষকে ঘরে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ।

রতন কুমার বাংলাদেশ সুগার ক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ৬৫ বছর বয়সী বাবার থাইরয়েডে অস্ত্রোপচার হয় ২০১৪ সালে। সম্প্রতি তাঁর কিছু সমস্যা দেখা দেয়। পরে ইডক্টরসের একজন চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ ও ওষুধে তাঁর বাবা সুস্থ হন।

রতন কুমার গণপতির মতো প্রতিদিন অনেক মানুষ ফেসবুকভিত্তিক এই গ্রুপ থেকে সেবা নিচ্ছেন। এ জন্য চিকিৎসকদের কোনো টাকা দিতে হয় না। বিনা মূল্যে নিজেদের দৈনন্দিন, পারিবারিক এবং হাসপাতালের কাজের পাশাপাশি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন প্রায় ১৫০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

‘২৪ ঘণ্টা ফ্রি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরার্মশ’ এই শ্লোগান নিয়ে গত ২১ এপ্রিল কাজ শুরু করে ইডক্টরস। উদ্যোগটি নেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম, মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালের চিকিৎসক আমির হোসেন এবং গৃহিণী দিনা আমিন। তাঁরা ফেসবুকভিত্তিক ‘এসএসসি ২০০০ এবং এইচএসসি ২০০২’ গ্রুপের সদস্য। সেই গ্রুপেই তাঁদের পরিচয় ও বন্ধুত্ব। করোনাভাইরাসের এই সময়ে মানুষকে ঘরে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকেই তাঁরা এই উদ্যোগ নেন।

ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ ইডক্টরসের সদস্য সংখ্যা গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত ছিল ৮০ হাজারের ওপরে।

চিকিৎসাসেবার ৯টি বিভাগের ১১ জন চিকিৎসক প্রথমে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন। দিনে দিনে তা বেড়েছে। এখন ৩০টি বিভাগের প্রায় ১৫০ চিকিৎসক পরামর্শ দেন এখানে।

চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চর্মরোগ, শিশু, মেডিসিন, গাইনি, চক্ষু, নাক-কান-গলা, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগের সমস্যা নিয়েই রোগীরা এখানে বেশি সহায়তা চান। করোনার উপসর্গে ভোগা লোকজনও পরামর্শ নেন। তাঁদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য সাত জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দল আছে।

গত শনিবার গ্রুপটিতে ঢুকে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই সমস্যার কথা জানিয়ে সেখানে পোস্ট দিচ্ছেন লোকজন। সঙ্গে সঙ্গে সেই পোস্টে একজন চিকিৎসককে ট্যাগ করে মেসেঞ্জারের ইনবক্সে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন গ্রুপের অ্যাডমিন। কাজটি বেশির ভাগ সময়েই করছেন উদ্যোক্তাদের একজন দিনা আমিন। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসক নিজেই মন্তব্য করে ইনবক্সে যোগাযোগ করতে বলছেন।

গ্রুপটির উদ্যোক্তা ও অ্যাডমিনদের একজন দিনা আমিন বলেন, চিকিৎসকেরা প্রথমে মেসেঞ্জারে রোগীর লক্ষণের বর্ণনা শোনেন। যেসব ক্ষেত্রে ইনবক্সে কথা বলে সেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন, সেসব ক্ষেত্রে তাঁরা মুঠোফোনে পরামর্শ দেন। কখনো কখনো ভিডিও কলেও রোগীকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে এখান থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।