গাজীপুরে করোনায় ৪২ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত সাড়ে তিন হাজার

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

গাজীপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল সোমবার মারা গেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু (৭১)। তাঁকে নিয়ে জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২। এর বাইরে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৮ জনের। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় ‘রেড জোন’ ঘোষণাকৃত এলাকায় হোম আইসোলেশনের থাকা করোনা ‘পজিটিভ’ এক ব্যক্তি মারা গেছেন।

গাজীপুরে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৯৮। গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খাইরুজ্জামান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জনের। তাঁদের মধ্যে গাজীপুর সদরে ১২ জন, কালিয়াকৈরে ১২ জন, শ্রীপুরে ২০ জন ও কালীগঞ্জে ১০ জন রয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন ৮২৬ জন। তবে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলায় গাজীপুরে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ জন, আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০৭ জন। কালীগঞ্জ উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩০৭ জন। কাপাসিয়ায় কেউ মারা যাননি, তবে আক্রান্ত হয়েছেন ২২৩ জন। শ্রীপুর উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, আর আক্রান্ত হয়েছেন ৪০০ জন। এ ছাড়া গাজীপুর সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের, আর সর্বাধিক আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬১ জন। জেলাজুড়ে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৪৭২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৩৯৮ জন।

গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে সংযুক্ত হয়েছেন ৫৭ জন ও কোয়ারেন্টিন মেয়াদ সম্পন্ন করেছেন ১৩২ জন। মোট হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৭৩৮, যাঁদের মধ্যে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদের কোয়ারেন্টিন শেষে বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন ৭ হাজার ৬৯১ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে বর্তমানে কোনো ব্যক্তি কোয়ারেন্টিনে নেই। এ নিয়ে গাজীপুরে কোয়ারেন্টিনে থাকা ৯ হাজার ৭৮৭ জনের মধ্যে চিকিৎসকের কাছ থেকে সুস্থতার সনদ পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৪০ জন। বর্তমানে জেলায় ৪২ জন আইসোলেশনে রয়েছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ‘রেড জোন’ ঘোষিত গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কোভিড-১৯ শনাক্ত আরও এক ব্যক্তির (৫৮) মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে করোনা উপসর্গ থাকায় গত ২৩ জুন ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নমুনা পরীক্ষায় পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫ জুন জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এরপর থেকে তিনি হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, ‘রেড জোন’ ঘোষিত অঞ্চলে এটি দ্বিতীয় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে এই ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা (৮০) কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়ে গত ২৭ জুন কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন।

গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের পরেই করোনার উচ্চ সংক্রমণ এলাকা গাজীপুরে। এরই মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে শিল্প–অধ্যুষিত জেলাটির সর্বত্র। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ভাইরাসটি এ পর্যন্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৪২ জনের।

গত ১১ এপ্রিল পুরো গাজীপুরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় লকডাউন তেমনভাবে মানুষ পালন করেনি। যত্রতত্র ঘুরে বেরিয়েছে মানুষ। এখনো বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দলে দলে মানুষ জড়ো হচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। জেলার সব শিল্পকারখানা চালু রাখায় দিন দিন ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ১৬ মার্চ এক ইতালিপ্রবাসীর শরীরে। ইতালি থেকে ১৪ মার্চ দেশে ফিরে তিনি গাজীপুরের পুবাইলে মেঘডুবি মা ও শিশুকেন্দ্রে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। ২৯ মার্চ মহানগরীর বারবৈকা এলাকায় দ্বিতীয় ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। তিনি ইতালিপ্রবাসী আত্মীয়ের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১০ এপ্রিল চারজনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুরে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনা মোকাবিলায় আমাদের নিজেদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।’