সেই মুক্তিযোদ্ধার পাশে নাটোরের জেলা প্রশাসক

মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের পাশে দাঁড়ালেন নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। ছবি: প্রথম আলো
মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের পাশে দাঁড়ালেন নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। ছবি: প্রথম আলো

রেললাইনের ধারের বস্তিতে ৪৮ বছর কাটানোর পর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের নাম গেজেটভুক্ত হয়েছে। কিন্তু রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি এক হাতে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, আরেক হাতে উচ্ছেদের নোটিশ নিয়ে কাঁদছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের এই অবস্থার কথা জানতে পেরে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার আব্দুলপুর রেললাইনের ধারের বস্তিতে মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের বাসায় যান। তাঁকে একটি বাড়ি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁকে তিনি টাকা ও খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ প্রথম আলোতে ‘রেললাইনের ধারে ৪৬ বছর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে তাঁর নাম ওঠে। খবর পেয়ে তাঁর বাসায় দেখা করতে গেলে তিনি উচ্ছেদের নোটিশ বের করে দেখান। এক হাতে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, আরেক হাতে উচ্ছেদের নোটিশ নিয়ে তিনি তখন কাঁদছিলেন। এ নিয়ে ১৯ জুন প্রথম আলোতে ‘অসহায় মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ এখন যাবেন কোথায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই সঙ্গে প্রথম আলো অনলাইনে তাঁর জীবন নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশিত হয়।

গতকাল নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ, লালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসাহাক আলী, লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মূল বানীন দ্যুতি মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের বাসায় যান।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ মুক্তিযোদ্ধার সমস্যাটি তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আমজাদ হোসেনের ভাতা নিয়ে যে জটিলতা ছিল, তার অবসান হয়েছে। এখন তিনি নিয়মিত ভাতা পাবেন। কয়েক দিনের মধ্যেই দুই মাসের ভাতা একসঙ্গে পাবেন। এখন সেটা নিয়মিত পাবেন। তিনি লালপুরের ইউএনওকে একটি নিষ্কণ্টক জমি দেখতে বলেছেন। জমি ঠিক হলে সরকার থেকে যে তিন লাখ টাকার বাড়ি করে দেওয়া হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনকে সেই বাড়ি করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ওই দিন তাৎক্ষিণকভাবে মুক্তিযোদ্ধাকে পাঁচ হাজার টাকা ও খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তারপর আনসার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ৭ নম্বর সেক্টরের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে অপারেশন চালিয়ে নাটোরে এসে অস্ত্র জমা দেন। যুদ্ধের সময় তাঁর ডান উরুতে গুলি লেগেছিল। সেই জায়গায় এখনো ক্ষত হয়ে রয়েছে। আমজাদ হোসেন ভ্যান চালিয়ে নিজের পাঁচ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন নদীতে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এক বছর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকার পর ৪৮ বছর ধরে তিনি সপরিবার রেললাইনের পাশের বস্তিতে বাস করছেন।