পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরে প্রথম টার্মিনাল এবং কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পায়রা বন্দরের সম্মেলনকক্ষ, কলাপাড়া, পটুয়াখালী, ৩০ জুন। ছবি: প্রথম আলো
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরে প্রথম টার্মিনাল এবং কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পায়রা বন্দরের সম্মেলনকক্ষ, কলাপাড়া, পটুয়াখালী, ৩০ জুন। ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা সমুদ্রবন্দরে প্রথম টার্মিনাল ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চীনের সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় পায়রা বন্দরের সম্মেলনকক্ষে দুপক্ষের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

‘পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। সে অনুযায়ী কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ চ্যানেলের চাড়িপাড়ায় প্রথম টার্মিনাল এবং কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মিত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত রাবনাবাদ চ্যানেলটি ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের এক তথ্যবিবরণীতে জানা গেছে, প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা, প্রাক্কলন এবং প্রকল্প চলাকালে কাজ দেখাশোনার জন্য কোরীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কুনহুয়া ডাইয়ং হেরিমকে নিয়োগ করা হয়েছে। গত ১৮ জুন কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের কাজটি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটিতে (সিসিজিপি) অনুমোদিত হয়। প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কাজটি বাস্তবায়ন করবে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। ৩০ মাসে কাজটি সম্পন্ন হবে। কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মিত হলে বছরে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার টিইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা যাবে। কন্টেইনার ইয়ার্ডের কাজের আওতায় ৩ লাখ ২৫ হাজার বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড, প্রশাসনিক ভবন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ওয়ার্কশপ, ফায়ার স্টেশন, কন্টেইনার ফ্রেইড স্টেশন, গেট হাউস, ফুয়েল স্টেশন, ভূগর্ভস্থ পানির আধার, পাম্প হাউস নির্মিত হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল, সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর এম জাকিরুল ইসলাম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কমান্ডার (অব) এম রাফিউল হাসাইন, সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের এদেশীয় প্রতিনিধি রিচার্ড চেন, প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান চেন জিচুন, ভাইস চেয়ারম্যান ঝাউ বাউহুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়ান গুয়াংহুয়া এবং ইয়াং জুইবো।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর এম জাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ এবং এ সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা গেলে পায়রা বন্দরের পুরো কার্যক্রম চালু করা যাবে। এ ছাড়া রাবনাবাদ চ্যানেলের পাশে লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় প্রথম টার্মিনাল এলাকায় যাতায়াতের জন্য ছয় লেনের সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সড়কের আন্ধারমানিক নদের ইটবাড়িয়া-চিংগুড়িয়া পয়েন্টে আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সব সময় কন্টেইনার জট লেগে থাকে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ পায়রা বন্দরকে পুরোপুরি চালু করা গেলে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা পায়রা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যেমন উন্নতি হবে, তেমনি দেশও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।