মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য শুনানির অপেক্ষা

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে দেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হয়েছে সাত মাস আগে। গত বছরের নভেম্বরে বিচারিক আদালত রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এখন আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে হাইকোর্টে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) হবে। একই সঙ্গে আসামিদের আপিল শুনানিও শুরু হবে। ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, হোলি আর্টিজান মামলার পেপারবুক ছাপার কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে পেপারবুক এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। পেপারবুক পেলে আইন অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ভয়াবহ ওই হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে পুরো দেশ। সেদিন জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে; যাঁদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয় ও ৩ জন বাংলাদেশি। সেই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।

জঙ্গি হামলার দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার। নজিরবিহীন ওই জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার বিচার শুরুর এক বছরের মাথায় বিচারিক আদালত রায় দেন।

>করোনা পরিস্থিতি না হলে এত দিনে হয়তো শুনানি শুরু হয়ে যেত বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায়ে আট আসামির মধ্যে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাত আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‍্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। আর খালাস পান মিজানুর রহমান। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাত আসামি কারাগারে রয়েছেন। খালাস পাওয়া মিজানুরও অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছেন বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

এরপর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার যাবতীয় নথিপত্র গত বছরের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে, যা একটি ক্রমিকে ডেথরেফারেন্স হিসেবে সংশ্লিষ্ট শাখায় নথিভুক্ত হয়। আইন অনুসারে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথরেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও আপিল করতে পারেন। সাধারণত ডেথরেফারেন্স ও আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। তবে এর আগে শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করতে হয়। 

আদালত–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নথিভুক্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শাখা পেপারবুক (চার-পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার) তৈরি করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তা ছাপানোর জন্য সরকারি ছাপাখানায় পাঠায়। এর সঙ্গে দণ্ডিত সাত আসামির জেল আপিল ও দুটি নিয়মিত আপিলও রয়েছে। পেপারবুক আসার পর বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হবে। এর পর তিনি হাইকোর্টের যে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন সেই বেঞ্চে ডেথরেফারেন্স শুনানি হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে শুনানির জন্য বিষয়টি আদালতের নজরে আনতেন বলে প্রথম আলোকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গত সোমবার তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে হয়তো এত দিনে ডেথরেফারেন্সের শুনানিও শুরু হয়ে যেত। এটি সেনসেশনাল (স্পর্শকাতর) মামলা। মৌলবাদীরা তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য আইএস দাবি করা নব্য জেএমবির জঙ্গিরা বিদেশিসহ এতগুলো মানুষ হত্যা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হাইকোর্টে দ্রুত বিষয়টি শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।