বাজেট প্রত্যাখ্যান, কপি ছিঁড়লেন বিএনপির সাংসদেরা

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখ্যান করে তার কপি ছিঁড়েছেন বিএনপির সাংসদেরা। তাঁরা বলেছেন, এই বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটকারীদের আরও সুযোগ বৃদ্ধির বাজেট। এই বাজেট করোনার সময় বীভৎস স্বাস্থ্য সংকটে পড়া মানুষের নাভিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেওয়ার বাজেট।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ পাশের (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ) প্রবেশ পথের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিএনপির পাঁচ সাংসদ এই প্রতিক্রিয়া জানান। এ সময় সাংসদেরা বাজেটকে ‘দরিদ্র মানুষের জীবন ও জীবিকার পরিপন্থী’ উল্লেখসহ নানা সমালোচনামূলক প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়ান।

সাংসদ জি এম সিরাজ বলেন, ‘মাত্র এক দিন (২৩ জুন) সংসদে সাধারণ আলোচনা করে এই বাজেট পাস করা হয়েছে। এক দিনের আলোচনায় বাজেট পাসের নজির ইতিহাসে নেই। আমরা এই বাজেট ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

অবিলম্বে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে ‘রোডম্যাপ’ দাবি করেন সাংসদ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার ও এই সংসদ গঠিত। যে কারণে জনগণের সংকট সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না। এই সংকটে যাঁরা কাজ করতে চান, পরামর্শ দিতে চান, সরকার তাঁদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে।

আবারও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অপসারণের দাবি জানিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘জাতীয় সংসদে আমিই প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য খাত সংস্কার চেয়েছি। তথাকথিত বিরোধী দলও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।’ তিনি বলেন, সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু দুর্নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করে গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে সরিয়েছে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা, মানব পাচারকারীরা এই সংসদে আছে।

দলীয় সাংসদদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা। এতে তিনি বলেন, পুরো বাজেটটি নানা রকম স্ববিরোধিতা এবং অসামঞ্জস্যতায় পরিপূর্ণ। এই বাজেটে রাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ নাগরিকের কল্যাণ, করোনার ভয়ংকর মহামারিতে মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে, ভরণপোষণ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দিশা নেই।

রুমিন বলেন, সরকারের হয়রানি, মামলা ও অত্যাচারের কথা ভুলে গিয়ে বিএনপি এই করোনায় সরকারের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, আগাম বাজেট প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু সরকার বিএনপির পরামর্শগুলো আমলে নেয়নি। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত সরকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছে, সেটা একমাত্র ক্ষমতাসীন দল ছাড়া আর কেউ কোনোভাবেই একটা সংকটকালীন বাজেট হয়েছে বলে রায় দেয়নি। প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে বলা হয়েছে, এই বাজেট করোনার ফলে সৃষ্ট জীবন ও জীবিকার সংকট মোকাবিলায় আদৌ সক্ষম নয়। ফলে আগামী দিনগুলোতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে।

রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেন, ‘আমরা ডকট্রিন অব নেসেসিটি অনুযায়ী কিংবা প্রেসিডেন্টের অরডিন্যান্স জারি করে ডিজিটাল মাধ্যমে বাজেট অধিবেশন করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমাদের বিশ্বাস, করোনার মতো ভয়ংকর একটা সংকটে যে যাচ্ছেতাই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার সমালোচনা এড়ানোর জন্যই অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি শেষ করতে চেয়েছে সরকার।’

বক্তব্যের পর বিএনপির পাঁচ সাংসদ জি এম সিরাজ, হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, মোশাররফ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম বাজেটের সারসংক্ষেপের কপি ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এই জনবিরোধী বাজেট মঞ্জুরিতে আমরা ক্ষুব্ধ, বিস্মিত।’