এ যাত্রায় বেঁচে গেল 'বুল্ডু'

ছোট্ট বিড়ালছানা ‘বুল্ডু’ এখন সুস্থ। দৌড়াদৌড়ি করে। ছবি: প্রথম আলো
ছোট্ট বিড়ালছানা ‘বুল্ডু’ এখন সুস্থ। দৌড়াদৌড়ি করে। ছবি: প্রথম আলো

ঘটনাটা গত ১০ মে সন্ধ্যাবেলার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তুষার সরকার শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রাধ্যক্ষের বাসার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ওই সময় প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাঁদছিল এক বিড়ালছানা। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছানাটিকে সেদিন ছেড়ে দেন।

এরপর তিন দিন আর চোখে পড়েনি বিড়ালছানাটি। চতুর্থ দিন মুমূর্ষু অবস্থায় রাকিবুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বিড়ালছানাটিকে দেখতে পান বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলের পাশে। খবর পেয়ে তুষার ছুটে এসে বিড়ালটিকে নিয়ে নেন তাঁর মেসে। এর সঙ্গে থাকা আরেকটি বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে নেন তামির হোসনে নামের এক বিদেশি শিক্ষার্থী। আহত বিড়ালটির দেখাশোনা শুরু করেন ওই দলের আরেকজন প্রসেনজিৎ কুমার।

তুষার সরকার, রাকিবুল হাসানসহ অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী তিন মাস ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনায় অভুক্ত হয়ে পড়া কয়েক শ কুকুর-বিড়ালকে নিয়মিত রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। তাঁরা প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় নিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় কুকুর-বিড়ালগুলোকে খাবার দেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা আহত বা অসুস্থ হয়ে পড়া কুকুর-বিড়ালকে চিকিৎসাসেবাও দিয়ে আসছেন।

মেসে নিয়ে আসা ছোট্ট বিড়ালছানাটিকে সুস্থ করতে তাঁদের অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। বিড়ালটির চোখের নিচে জখম হয়েছিল। কোনোরকমে চোখটি বেঁচে গেছে। চোখের নিচে থাকা হাড়টিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাঁরা সবাই মিলে বিড়ালছানাটির নাম দেন ‘বুল্ডু’। তাঁদের সবার আক্ষেপ ও প্রশ্ন, ‘এই ছোট্ট বিড়ালছানাটি এমন কী ক্ষতি করেছিল মানুষের বা করতে পারে?’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মানবিক প্রচেষ্টায় মৃতপ্রায় ছোট্ট বিড়ালছানা ‘বুল্ডু’ সুস্থ হয়ে উঠেছে। সে এখন দৌড়াদৌড়ি করে বেড়ায়। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মানবিক প্রচেষ্টায় মৃতপ্রায় ছোট্ট বিড়ালছানা ‘বুল্ডু’ সুস্থ হয়ে উঠেছে। সে এখন দৌড়াদৌড়ি করে বেড়ায়। ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীরা জানান, বুল্ডুকে মেসে নেওয়ার পাঁচ থেকে ছয় দিনের মাথায় হঠাৎ ডান চোয়ালের অংশ ফুলে ওঠে। তারও দুদিন পর চোখ–মুখ দিয়ে পুঁজ বেরোতে থাকে। এরপর ক্ষত হয়ে চামড়া খসে পড়ে যায়। রাজশাহী নগরের মুন্নাফের মোড় এলাকায় একটি পশু হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে তখন বিড়ালটিকে কয়েক দিনে সাতটা অ্যান্টিবায়োটিক বড়ি খাওয়ানো হয়। এ অবস্থায় হঠাৎ একদিন চারবার বমি করে। শরীর একদম ভেঙে পড়ে। আবার ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে নিয়ে আবার মেসে ফেরা হয়। বুল্ডু মুখে ব্যথার কারণে খেতে পারত না। অধিকাংশ সময় তরল করে খাইয়ে দেওয়া হতো। তারপর কিছুটা সুস্থ হয় ও। তবে তিন চার দিন পর আবার গায়ে জ্বর আসে। ১০৭ থেকে ১০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ফের ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু আবারও বমি করে।

একদিন কাজ সেরে রাতে গিয়ে প্রসেনজিৎ দেখেন, ডান চোখের নিচে চোয়ালের একটি হাড় বেরিয়ে গেছে। এক ইঞ্চির মতো ভেঙে পড়ে যায় সেখান থেকে। এতে তাঁরা ভয় পেয়ে যান। এবার তাঁরা নারিকেলবাড়িয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের অধীন পরিচালিত ভেটেরিনারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা চেয়েছিলেন, একটা ছোটখাটো সার্জারি যেন করা হয়। তবে ওই ক্লিনিক চিকিৎসক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সের অধ্যাপক জালাল উদ্দিন সরদার বিড়ালটিকে ড্রেসিংসহ ওষুধ লাগিয়ে ইনজেকশন দেন। সঙ্গে কিছু ওষুধ দিয়ে দেন। পরপর তিন দিন ওই ক্লিনিকে গিয়ে ইনজেকশন দিয়ে নিয়ে আসা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েক দিন ধরে বুল্ডু প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখন রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করে। পুরোনো ক্ষত সেরে উঠেছে। তাঁদের এই বিড়ালছানাটিকে সুস্থ করতে খরচ হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। কিন্তু এই শিক্ষার্থীদের ফের প্রশ্ন, ‘ও কী এমন ক্ষতি করেছিল?’