পাহাড়ের আম যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা

আম সুরক্ষার জন্য ‘ব্যাগিং’ করছেন রাঙামাটির নানিয়ারচরের বগাছড়ি এলাকার বাগানি মানিক খান। এখানকার আম রপ্তানির জন্য অনুমোদন পেয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে।  ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
আম সুরক্ষার জন্য ‘ব্যাগিং’ করছেন রাঙামাটির নানিয়ারচরের বগাছড়ি এলাকার বাগানি মানিক খান। এখানকার আম রপ্তানির জন্য অনুমোদন পেয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

রাঙামাটিতে এবার আমের ফলন ভালো। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমের বাজারজাত করা নিয়ে চিন্তায় আছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে কিছু কিছু পাইকার রাঙামাটিতে গিয়ে আম কিনছেন। তবে চাষিদের ভাষ্য, ন্যায্য দাম তাঁরা পাচ্ছেন না।

এর মধ্যেই একটি খুশির খবর পেয়েছেন পাহাড়ের আমচাষিরা। প্রথমবারের মতো রাঙামাটি থেকে আম রপ্তানি হয়েছে বিদেশে। হিমসাগর ও আম্রপলি জাতের ৭০০ কেজি আমের একটি চালান ইতিমধ্যে ইতালিতে পৌঁছেছে। রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও। এ দুটি দেশে তিন হাজার কেজি আম রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া গেছে। রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে আরও ৮ হাজার ৫০০ কেজির। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টার সূত্র জানায়, বিদেশে রপ্তানির জন্য নির্ধারিত আম পাঠানো হচ্ছে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের বগাছড়ি এলাকার আমবাগান থেকে। সেখানে পাঁচ হাজার গাছে ফলন হয়েছে। রপ্তানির জন্য নেওয়া আমের দাম চাষিরা পাবেন প্রতি কেজি ১০০ টাকা হিসেবে।

গত মঙ্গলবার ওই বাগানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, আমচাষি ও শ্রমিকেরা বাগান পরিচর্যা করছেন। সেখানে ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, আম্রপলি, হিমসাগর, মল্লিকাসহ ১০ জাতের আম রয়েছে। বাগানজুড়ে আম ‘ব্যাগিং’ করা হয়েছে।

এখানকার আমচাষি মো. মানিক খান জানালেন, চলতি মৌসুমে তাঁদের কয়েকজনের মালিকানাধীন পাঁচটি আমবাগানে প্রায় ৫ হাজার আমগাছে ফলন এসেছে। প্রায় ছয় লাখ আমে ব্যাগিং করা হয়েছে। গত ১৮ জুন তাঁরা আম রপ্তানির অনুমোদনের বিষয়টি জানতে পারেন।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. মেহেদী মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির নানিয়ারচরের চাষিরা বাগান থেকে ছিঁড়ে বাছাই করে আম ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরে রপ্তানি ও কোয়ারেন্টিন কর্মকর্তারা পরীক্ষা, যাচাই-বাছাইয়ের পর ফল রপ্তানিকারক সমিতির মাধ্যমে এসব আম বিদেশে পাঠানো হয়।

এই কর্মকর্তা জানান, এর আগে বিভিন্ন দেশের হাইকমিশন ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আম পাঠানো হয়। তাঁরা আম খেয়ে এর স্বাদ ও ঘ্রাণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এর ধারাবাহিকতায় ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমের চাহিদা এসেছে। ভালো মানের আম দিতে পারলে প্রতিবছর তিন থেকে চার লাখ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা যাবে। আগামী বছর থেকে ইতালিতে সবজি হিসেবে কাঁচা কাঁঠাল রপ্তানির আশ্বাস পাওয়া গেছে। তিনি জানান, করোনার কারণে কার্গো বিমান ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সে কারণে ফল রপ্তানিকারক সমিতি তেমন আম নিতে চাচ্ছে না। 

নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ন্যায্য দাম না পাওয়ায় পাহাড়ের অনেক কৃষক আম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের অনাগ্রহ দেখে বগাছড়ি এলাকায় কৃষকদের পরীক্ষামূলকভাবে নিবিড় পরিচর্যা ও ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা আম চাষে উদ্বুদ্ধ করি। এখন এখানকার আম বিদেশে যাচ্ছে, এটা একটা আনন্দের খবর।’