লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি, স্মরণীয় হয়ে থাকবেন

রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মরদেহ বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় পরিবারের উপস্থিত সদস্যরা  তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।  ছবি: সাইফুল ইসলাম
রাজধানীর গুলশানে আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মরদেহ বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় পরিবারের উপস্থিত সদস্যরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে গতকাল বুধবার শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ও মানসম্মত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা লতিফুর রহমান গতকাল ইন্তেকাল করেন। 

প্রখ্যাত এই শিল্পোদ্যোক্তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন মন্ত্রী, সাংসদ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে শোক জানিয়েছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন অনেকেই। 

মন্ত্রী–সাংসদদের শোক

লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শোকবার্তায় অর্থমন্ত্রী দেশের অর্থনীতিতে মরহুমের অবদানের কথা স্মরণ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এক শোকবার্তায় দেশের অর্থনীতিতে মরহুম লতিফুর রহমানের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। 

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

পৃথক শোকবার্তা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সাংসদ।

বিএনপি, জাপাসহ বিভিন্ন দলের শোক

লতিফুর রহমান মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পৃথক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, লতিফুর রহমান দেশের একজন খ্যাতিমান উদ্যোক্তা ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। শিল্প-কলকারখানা স্থাপন করে দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। কর্মক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার জন্য তিনি সর্বমহলে সুনাম অর্জন করেছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিক পত্রিকা—প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার–এর প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমান বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। দেশ ও দশের জন্য তাঁর অবদান মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবে।

>মন্ত্রী-সাংসদ, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাদের শোক। অর্থনীতিতে তাঁর অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ।

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক শোকবার্তায় বলেছেন, লতিফুর রহমান ট্রান্সকম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারিত করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহসা পূরণ হওয়ার নয়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেছেন, ব্যবসায় সততার অনুশীলন এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ ও সামাজিক কর্তব্য পালনের জন্য লতিফুর রহমান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি-জেপির পক্ষ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারম্যান ও বর্তমান সাংসদ আনোয়ার হোসেন এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম। শোকবার্তায় তাঁরা বলেছেন, তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তাকে হারাল। 

ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম শোকবার্তায় বলেন, দেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা এবং সততার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন লতিফুর রহমান।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, লতিফুর রহমান কেবল একজন সৎ, নিষ্ঠাবান বিশিষ্ট ব্যবসায়ীই নন, অত্যন্ত উঁচু মাপের মানুষ ছিলেন। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল বলেছেন, লতিফুর রহমান একজন সৎ ও সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই অর্থনীতি পুনর্গঠনে ভূমিকা পালন করেছেন।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও এবি পার্টি।

ব্যবসায়ী সংগঠনের শোক

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন লতিফুর রহমান। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘লতিফুর রহমানের মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।’

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে, তিনি এই চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিন মেয়াদে সাতবার। এমসিসিআই শোক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আধুনিকায়নে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং বিশেষ করে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)। সংগঠনটি বলেছে, লতিফুর রহমানের মৃত্যু শুধু তাঁর পরিবার নয়, পুরো জাতির জন্য বড় ক্ষতি।

গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে পৃথক শোকবার্তা দিয়েছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, দেশের শিল্প–বাণিজ্যের অন্যতম পথিকৃৎ লতিফুর রহমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি সব সময় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকবেন। 

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেছেন, দেশের বাণিজ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পায়ন, ব্যবসায় উদ্যোগ ও সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী এক শোকবার্তায় বলেন, ব্যবসায়ে নীতি–নৈতিকতার চর্চা করেও যে সফল হওয়া যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ লতিফুর রহমান।

আরও শোক

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শোক বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় লতিফুর রহমান সহায়তা করেছেন। তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ট্রান্সকম গ্রুপের এই সহায়তার কথা জাদুঘরের ট্রাস্টিরা চির কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। 

লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও নতুনধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদীসহ অনেকেই। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।