দেশের ১৭ কারাগারে করোনা, কমেছে বন্দী

দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা ৪১ হাজার ১৫০ জন। করোনা রোগী শনাক্তের আগে মার্চের প্রথম সপ্তাহে এসব কারাগারে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি, অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮৮ থেকে ৮৯ হাজার বন্দী ছিলেন। এক সপ্তাহ ধরে সেই সংখ্যা কমে এখন গড়ে প্রতিদিন ৭১ হাজার বন্দী আছেন।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলার সংখ্যা কমে গেছে। সেই কারণে আসামিও কম গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসছে। করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চ্যুয়াল আদালতের জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছেন অনেক বন্দী। ফলে স্বাভাবিক পরিস্থিতির তুলনায় কারাগারগুলোতে এখন প্রায় ১৭ হাজার বন্দী কম আছে। কিন্তু তবু করোনা সংক্রমণ রোধ করা যাচ্ছে না। করোনা ছড়িয়েছে ১৭টি কারাগারে।

 কারা অধিদপ্তর ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপরই থানাগুলোতে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা কমতে থাকে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে গত মে মাসে সরকার দেশের ৬৮ কারাগার থেকে লঘু দণ্ড পাওয়া ২ হাজার ৮৮৪ বন্দীকে মুক্তি দেয়। করোনার সংক্রমণ রোধে বন্ধ হয়ে যায় দেশের বিভিন্ন আদালত। গত ১১ মে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সারা দেশে জামিন শুরু হয়। ২৫ জুন পর্যন্ত চলা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ৩৫ হাজার ১৮৮ জন বন্দী জামিন পান।

করোনা সংক্রমণ রোধে এর আগে গত ১ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষ সারা দেশের কারাগারগুলোতে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয়। সামনের ঈদুল আজহাতেও সাক্ষাৎ বন্ধ থাকবে।

>চিকিৎসক, নার্স ও কারারক্ষী মিলে আক্রান্ত ৩৮
ঈদে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকছে।
৬৮টি কারাগারে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১৭ হাজার বন্দী কমেছে।
১৪টি কারাগারে বন্দী ও কারারক্ষী মিলে ১৮৮ জন কোয়ারেন্টিনে।

কারা অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-প্রিজন্স) মুহাম্মদ মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কম আসামি
গ্রেপ্তার হয়ে এবং ভার্চ্যুয়াল আদালতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসামি জামিন হওয়ায় কারাগারে বন্দীর চাপ কমে গেছে।

তবে বন্দীর চাপ কমলেও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারাগারে এক বন্দী মারা গেছেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত কারাগারের একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও ৩৬ জন কারারক্ষী আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। দেশের ১৭টি কারাগারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এই কারাগারগুলোর মধ্যে আছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, রংপুর, খুলনা, যশোর, নেত্রকোনা, ভোলা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ কারাগার।

এদিকে গত রোববার দেশের ১৪টি কারাগারে বন্দী ও কারারক্ষী মিলে ১৮৮ জন কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১২৩ জন বন্দী, ৪০ জন কারারক্ষী, ১৩ জন কর্মচারী ও কর্মচারীদের সন্তান ১২ জন।

দেশের কারাগারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ৬৮ কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ড ও সেল প্রতিদিন জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। বন্দীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজনে বন্দীদের মাস্ক পরানো হচ্ছে। প্রতিটি কারাগারে আসা নতুন বন্দীদের জন্য ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য সব কারাগারে কিছু ওয়ার্ড ও সেল খালি করে কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

কারা মুখপাত্র মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিকে চারজন বন্দী ও একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হলেও তাঁরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছেন। এ ছাড়া কারারক্ষীরাও সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন। আর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে কারাগারের অনেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছেন।