ওই হামলা ছিল অকল্পনীয়

>হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার চার বছর পূর্ণ হলো গতকাল। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাবিহা আলম

প্রথম আলো: হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার চার বছর হলো। এবার প্রেক্ষাপটটা একটু আলাদা। কেমন দেখেন ভবিষ্যৎ?

মনিরুল ইসলাম: সত্যিই। এবার প্রেক্ষাপট আলাদা। বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা মহামারির বিস্তার ঘটেছে। সময়ের পরিক্রমায় হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার চার বছর পূর্ণ হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই হামলা যেকোনো বিবেচনায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে তুলনীয় যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারের হামলা কিংবা মুম্বাইয়ের তাজ অ্যাটাক। যদিও বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা নতুন নয়। ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে বোমা হামলার ঘটনা কিংবা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা কখনোই বাংলাদেশ ভুলবে না।

প্রথম আলো: কেন এই হামলা তাৎপর্যপূর্ণ?

মনিরুল ইসলাম: প্রথমবারের মতো আমরা জানতে পারলাম বাংলাদেশের শিক্ষিত অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তানেরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে। এটা ছিল একরকম অকল্পনীয় ঘটনা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করে জঙ্গি হামলার ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। এত বিস্তারিত এবং দীর্ঘ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কাভারেজ, জিম্মি হয়ে থাকা মানুষকে নিয়ে রাতভর উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা, ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হওয়া—সব মিলিয়ে অন্য যেকোনো হামলার তুলনায় এটা ছিল ভিন্ন মাত্রার।

প্রথম আলো: সে জায়গা থেকে কতটুকু অগ্রগতি হলো বাংলাদেশের?

মনিরুল ইসলাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি হামলার পরপরই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল অবস্থান নেয়। বাহিনীর ওপর কঠোর নির্দেশ ছিল জঙ্গিবাদ প্রতিহত করা এবং কোনোভাবেই যেন জঙ্গি হামলার ঘটনা না ঘটে। তদন্তের পাশাপাশি চলে অভিযান। আমরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করেছি। ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর যে কাঠামো গড়ে উঠেছিল, সেটিও আমরা ভেঙে দিতে সক্ষম হই। আমরা তাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক আসার লাইন ধ্বংস করে দিই। অর্থায়নের পথও বন্ধ করে দিই।

প্রথম আলো: নব্য জেএমবির নেতৃত্বে কে আছে এখন?

মনিরুল ইসলাম: সে অর্থে কোনো নেতা এখন নেই। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম চৌধুরী ও সারওয়ার ক্যারিশম্যাটিক লিডার ছিল। তারা নিহত হওয়ার পর মাইনুল মুসা দলের হাল ধরেছিল। একরকম গায়ে খেটেই জঙ্গিবাদ বিস্তারে কাজ করে গেছে। অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ করেছে। জঙ্গি অভিযানে মাইনুল ওরফে মুসার মৃত্যুর পর সেভাবে আর দাঁড়াতে পারেনি। এরপরও তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

প্রথম আলো: জঙ্গিরা এখন কতটা সক্রিয়?

মনিরুল ইসলাম: মূলত ভার্চ্যুয়াল জগতে তাদের উপস্থিতি আছে। দেশের বাইরে থেকেও ইন্ধন আছে। আসলে জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস বা জঙ্গিদের গ্রেপ্তার বা আইনের আওতায় আনা হলেও তাদের মতাদর্শ তো ধ্বংস করা যায়নি। তারা অনলাইনে উগ্রবাদী লেখা, বক্তব্য প্রচার করে।

প্রথম আলো: সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে মানুষের অসন্তোষ আছে। মহামারির সময় সুশাসনের অভাব প্রকটভাবে দেখা গেল। ক্ষুব্ধ মানুষের জঙ্গিবাদে জড়ানোর ঝুঁকি কতটা?

মনিরুল ইসলাম: দেখুন, বিশ্বের বড় দেশগুলোর অবস্থাও নাজুক। এখনো কিন্তু বাংলাদেশে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার অনেক কম। হ্যাঁ, অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পাশে সরকার যথাসাধ্য দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। যৌক্তিকভাবে চিন্তা করলে মানুষ ক্ষুব্ধ হবে না।