করোনার উপসর্গ নিয়ে দেড় হাজারের বেশি মৃত্যু: সিজিএস

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গতকাল বুধবার পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৮৮৮ জন। এর বাইরে করোনার সংক্রমণের লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ে ২৭ জুন পর্যন্ত মারা গেছেন দেড় হাজার মানুষ। সবশেষ সপ্তাহে এমন মৃত্যু হয়েছে ১৯৮ জনের। তার আগের সপ্তাহে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয় ২০৫ জনের।

২১ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত সময়ের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ২৫টি গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে আজ বৃহস্পতিবার নতুন প্রতিবেদন দিয়েছে বিপিও। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) একটি প্রকল্প। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বিপিও। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন দিচ্ছে তারা।

গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার উপসর্গ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ৪৫১ জন। এরপর ঢাকায় ৩৩৮ জন, খুলনায় ১৮৫ জন, রাজশাহীতে ১৪৮ জন, বরিশালে ১৭০ জন, সিলেটে ৮৩ জন, রংপুরে ৭০ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৫ জন।

বিপিও বলছে, গত ৮ মার্চ থেকে করোনা বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। এতে দেখা যায়, ২২ থেকে ২৮ মার্চের সপ্তাহে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়। এর পরের সপ্তাহে এটি দাঁড়ায় ৬৩ জনে। এরপর ১০৬ থেকে ১২০ জনে পৌঁছায়। তারপর আগের সপ্তাহের চেয়ে কমতে থাকে। পরের সপ্তাহগুলোতে ১১৪, ৯৩, ৫০, ৬৭, ৪৮ জনের মৃত্যু হয়। ৫ সপ্তাহ ধরে এটি বাড়ছে। এ সময় সপ্তাহে ৭৩, ১৫৪, ২০৬, ২০৫ ও সর্বশেষ ১৯৮ জনের মৃত্যু হয়।

বিপিওর গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা নিয়মিতভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করছেন। ফলে প্রকাশিত পুরোনো তথ্যও মাঝেমধ্যে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর আগে মে মাসের শেষ প্রতিবেদন সংশোধন করে বড় পরিবর্তন করা হয়। তখন উপসর্গে মোট মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে কমানো হয়। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে সংশোধনের পর এটি বাড়ছে।

গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনা রোগীর মতো উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তাঁরা করোনায় সংক্রমিত না-ও হতে পারেন। একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে ৮৫ শতাংশের করোনা পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

গবেষকেরা বলছেন, জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন মিলে ২৫টি গণমাধ্যম থেকে প্রতিদিন তথ্য নিচ্ছে বিপিও। এরপর এসব তথ্য থেকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্যটা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে মাঠপর্যায় থেকে এসব তথ্য যাচাই করা হয় না।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আরও কয়েকটি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেছে বিপিও। তাদের প্রতিবেদন বলছে, করোনা নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে গত ২৭ জুন পর্যন্ত ৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এ ছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনা বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের মতো অনিয়ম ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১১ হাজার ২৮ জনকে।

বিপিও প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে ২১৭টি নির্যাতন ও সামাজিক কলঙ্ক দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৭২টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ ত্রাণসামগ্রী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তার দাবিতে, বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে ৪১ শতাংশ এবং ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ৬ শতাংশ। এ ছাড়া করোনা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে ১৩২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে। এতে ১৮ জন মারা গেছেন এবং ৫৫১ জন আহত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনায় মৃত্যুর হিসাব দেওয়া হয় প্রতিদিন। তবে করোনার উপসর্গ বা সন্দেহজনক মৃত্যুর কোনো সরকারি তথ্য দেওয়া হয় না।