'সেই নেগেটিভ খবরেই স্বস্তি পাই'

চাঁদপুর পুরানবাজার এলাকার অগ্রণী ব্যাংক শাখার করোনাজয়ী কর্মকর্তা এ জে এম সালেহ। ছবি: প্রথম আলো
চাঁদপুর পুরানবাজার এলাকার অগ্রণী ব্যাংক শাখার করোনাজয়ী কর্মকর্তা এ জে এম সালেহ। ছবি: প্রথম আলো

‘ছাত্রজীবন থেকেই সব সময় পজিটিভ মানসিকতা নিয়ে চলছি। কাজও করেছি পজিটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে। আমার অভিধানে নেগেটিভ শব্দের স্থান নেই, ছিলও না কোনো দিন। নেগেটিভ শব্দটিকে বরাবরই ঘৃণা করতাম। অথচ করোনা পজিটিভ হওয়ার পর পজিটিভ শব্দটির প্রতি আমার মনে নেগেটিভ ধারণা তৈরি হয়।’

কথাগুলো বললেন করোনাজয়ী তরুণ ব্যাংক কর্মকর্তা এ জে এম সালেহ (৩৩)। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বরদিয়া গ্রামে। তিনি চাঁদপুর পুরানবাজার এলাকায় অগ্রণী ব্যাংক শাখার কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘করোনাকাল শুরুর পর থেকে প্রতিদিন ব্যাংকে নিয়মিত যাই। নিজের সাধ্যমতো গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মস্থলে লেনদেন করি। এরপরও আমার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। কয়েক দিন জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নমুনা দিই। গত ৮ জুন আমার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়।’

এ জে এম সালেহ বলেন, ‘সংক্রমিত হওয়ার পর আমার বাড়িসংলগ্ন একটি মাদ্রাসার অতিথিকক্ষে আইসোলেশনে থাকি। ঝুঁকি এড়াতে স্ত্রী, দুই বাচ্চা ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থাকি। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে নিয়মিত ওষুধপথ্য খাই। মাল্টা, পেয়ারা ও ভিটামিন সি-যুক্ত ফল খাই। আদা ও লবঙ্গ দিয়ে দিনে একাধিকবার গরম চা পান করি। এতে শরীরের উন্নতি হয়। করোনার সঙ্গে ১৫ দিন লড়াইয়ের পর পুনরায় নমুনা দিই। অপেক্ষায় থাকি, কখন নেগেটিভ খবর পাব। গত শনিবার পরপর দুবারের নমুনা পরীক্ষায় আমার করোনা নেগেটিভ আসে। যে নেগেটিভ শব্দটিকে সারা জীবন ঘৃণা করে আসছি, সেই নেগেটিভ শব্দটির জন্যই ১৯ দিন অপেক্ষা করেছি। শেষমেশ সেই নেগেটিভ খবরেই স্বস্তি পাই। নেগেটিভের মধ্যেও যে পজিটিভ কিছু থাকে এবং পজিটিভের মধ্যেও যে নেগেটিভ কিছু থাকে, তা এবার বুঝলাম। আগামী রোববার কর্মস্থলে পুনরায় যোগ দিয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে সঁপে দেব।’

করোনাজয়ী এই তরুণ ব্যাংকার সবাইকে মনোবল শক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘করোনাকে ভয় করার কিছু নেই। নিয়ম মেনে চললে একে সহজেই জয় করা সম্ভব। মানুষের ক্ষমতা অনেক। একটি ভাইরাসের কাছে মানুষ কখনো হারতে পারে না। মানুষ করোনাকে সম্পূর্ণভাবে জয় করবেই।’

এ ব্যাপার জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাজিব কিশোর বণিক বলেন, ওই ব্যাংকার দৃঢ় মনোবল দিয়ে যেভাবে করোনাকে জয় করে সুস্থ হয়েছেন, তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁর সেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গিও ইতিবাচক।