মুন্সিগঞ্জে প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় গড়ে ২১টির বেশি 'পজিটিভ'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জে প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় গড়ে ২১টির বেশি নমুনা করোনা ‘পজিটিভ’ শনাক্ত হচ্ছে। গত ৯২ দিনে ১০ হাজার ৪১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ ব্যক্তি পাওয়া গেছে ২ হাজার ২০৬ জন। তাঁদের মধ্যে গত ৩৩ দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৫৭ জন। আজ শুক্রবার পর্যন্ত জেলা থেকে ১০ হাজার ৭২৯ জনের নমুনা পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত রিপোর্ট এসেছে ১০ হাজার ৪১৬ জনের। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, পরীক্ষাকৃত নমুনায় আক্রান্তের হার ২১ দশমিক ১৭ জন।

মুন্সিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে গত ৩ এপ্রিল থেকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাবে নমুনা পাঠানো শুরু হয়। গত ১১ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। জেলা থেকে প্রথমে আইইডিসিআর ল্যাবে নমুনা পাঠানো হলেও বর্তমানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) ল্যাবে এই জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে ৫৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সেখানে ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সে হিসাবে এপ্রিল মাসে নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভের হার ছিল ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া গত মে মাসে জেলায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ওই মাসে ৩ হাজার ৩৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন ৬৩০ জন। মে মাসের হিসাব অনুযায়ী সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হারে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিল মাসের তুলনায় যা প্রায় ৮ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে, এপ্রিল ও মে মাসকে জেলায় নমুনা পরীক্ষা ও পজিটিভের সংখ্যার দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে জুন মাস। ওই মাসে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৬ হাজার ৮ জনের। সেখানে করোনা পজিটিভ হন ১ হাজার ৩৯৭ জন। জুন মাসের তথ্য মোতাবেক, পরীক্ষাকৃত নমুনার ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশই করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।

তবে মে ও জুন মাসের প্রথম তিন সপ্তাহের সংক্রমণ হারের তুলনায় গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও পরিসংখ্যান বলছে, ওই সপ্তাহেও সংক্রমণের হার ছিল ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এদিকে চলতি জুলাই মাসের প্রথম তিন দিনে ৪৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ১০০ জন। এই তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভের হার ২২ দশমিক ২৩ শতাংশ।

মুন্সিগঞ্জের সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের জীবন এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশাল জনগোষ্ঠীর বিপরীতে করোনা মোকাবিলায় এই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি খুব নগণ্য ও দায়সারা গোছের। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ও করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবসহ চিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই অতি দ্রুত এই জেলায় করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব স্থাপনের দাবি জানান তাঁরা।

সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জুন মাসে মুন্সিগঞ্জ জেলায় “পিক” (সর্বোচ্চ আক্রান্তের সময়) চলছিল। তবে আল্লাহর রহমতের জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। আশা করি, এখন সংক্রমণের সংখ্যা কমতে থাকবে।’ এদিকে, অন্যান্য জেলার তুলনায় মুন্সিগঞ্জে মৃত্যুর হার বেশি। তবে কারণ হিসেবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘অন্যান্য জেলার তুলনায় আমরা মৃত সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় বেশি তৎপর করেছি। তাই এ জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক।’

তিনি আরও বলেন, করোনার সঙ্গে মানুষের মধ্যে উদাসীনতাও বেড়েছে। মানুষ বেপরোয়াভাবে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাজার-মার্কেটগুলোতে জটলা লেগেই আছে। যেখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হওয়ার কথা, সেখানে মাস্ক ছাড়াই বাইরে বেরোচ্ছেন তাঁরা। স্বাস্থ্যবিধির মেনে না চললে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। ব্যক্তিসচেতনতা বাড়াতে হবে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার ১২৯ জনসহ এ পর্যন্ত জেলার মোট ১০ হাজার ৭২৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ হাজার ৪১৬ জনের নমুনার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন আরও ৩১৩ জন। এ পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৯৪১ জন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ২০৪, সিরাজদিখান উপজেলায় ৩৩৬, লৌহজং উপজেলায় ২৯৫, শ্রীনগর উপজেলায় ১৯৪ জন ও গজারিয়া উপজেলায় ২৩৬ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এর মধ্যে জেলায় করোনায় মারা গেছেন ৫২ জন। মৃতদের মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছেন ২৪ জন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ৯ জন, সিরাজদিখান উপজেলায় ৮ জন, শ্রীনগর উপজেলায় ৪ জন, লৌহজং উপজেলায় ৫ জন ও গজারিয়া উপজেলায় ২ জন। এদিকে, মুন্সিগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৪১ জন।