১২ জেলায় বন্যায় ১৫ লাখ মানুষের ক্ষতি, দ্রুত অবনতির শঙ্কা

যমুনার পানি বাড়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। বুধবার দলিকার চরে। ছবি: প্রথম আলো
যমুনার পানি বাড়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। বুধবার দলিকার চরে। ছবি: প্রথম আলো

বন্যা শুরুর সাত দিনের মাথায় দেশের ১২টি জেলায় পানি ঢুকে পড়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ঘরবাড়ি ও ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ১৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছে সাড়ে তিন লাখ মানুষ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হিসাবে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২ জেলার মধ্যে শুধু নীলফামারী ও সুনামগঞ্জে ত্রাণের মজুত আছে। বাকি জেলাগুলোতে সরকার থেকে পাঠানো ত্রাণ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হচ্ছে জামালপুর। এ জেলার ৩ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরই রয়েছে গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলা।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নতুন মোড় নিতে পারে। উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গসহ হিমালয়ের পাদদেশে মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় হয়ে উঠবে। এতে ওই সব এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়ে সেই পানি ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পূর্বাভাস ছিল, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাবে। কিন্তু এখন মৌসুমি বায়ুর বিস্তৃতির ধরন দেখে মনে হচ্ছে, মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা অব্যাহত থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের চারটি নদী অববাহিকায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পানি একযোগে বাড়তে পারে। কুড়িগ্রাম ও জামালপুর হয়ে পানি ব্রহ্মপুত্র দিয়ে দ্রুত বাড়বে। এতে উত্তরাঞ্চলসহ মানিকগঞ্জ পর্যন্ত পানি দ্রুত বাড়তে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে তিস্তার পানি বেড়ে লালমনিরহাট থেকে রংপুর পর্যন্ত বন্যার পানি বাড়তে পারে।

বন্যা কবলিত জেলাগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ি, সিলেট ও সুনামগঞ্জ।

>

মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে উজানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
সেই পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসবে

জানতে চাইলে দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ আবদুল লতিফ খান প্রথম আলোকে বলেন, অন্য বছরগুলোর তুলনায় এ বছরের বন্যা পরিস্থিতি বেশ ভিন্ন। এরই মধ্যে দেশের যেসব জেলায় বন্যা শুরু হয়েছে, সেখানে পানিবন্দী মানুষ গাদাগাদি করে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি জেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গঙ্গা ও পদ্মার পানি এরই মধ্যে মুন্সিগঞ্জে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যার পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে আপাতত বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

সিলেটের নদীগুলোতেও পানি এ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগে হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরীর পানিও এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাড়তে পারে।

সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে দুর্গত মানুষের জন্য নগদ অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, এসব ত্রাণ খুব কম মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা থেকে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সর্বশেষ বন্যার ক্ষেত্রে আমরা সরকারের দিক থেকে একই আচরণ দেখছি। তারা শুধু সরকারি প্রশাসন যন্ত্রকে দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলার কাজ করতে চাইছে। এমনকি স্থানীয় সরকারের সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিচ্ছে না। এটি খুবই অকার্যকর পদ্ধতি। বন্যার মতো জাতীয় দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। নয়তো এ ধরনের মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি বাড়বে।