নমুনা দিয়ে চিকিৎসকের দিনভর অস্ত্রোপচার, রাতে কোভিড শনাক্ত

ছবি রয়টার্স
ছবি রয়টার্স

কুষ্টিয়ায় এক চিকিৎসক কোভিড–১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়ার পরদিন গত বৃহস্পতিবার দিনভর অস্ত্রোপচার করেছেন। ওই দিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জেলার দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে তিনি অন্তত আটটি প্রসূতি অস্ত্রোপচার করেন বলে জানা যায়। এতে ওই সব মা ও নবজাতকের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সফর আলী নামের ওই চিকিৎসক গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (গাইনি)। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুঠোফোনে চিকিৎসক সফর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার খবর জানার পরপরই অস্ত্রোপচার কক্ষ ছেড়ে বাড়ি চলে আসি। তবে শরীরে কোভিডের কোনো উপসর্গ নেই। হালকা জ্বর ছিল, সেটাও নেই। অস্ত্রোপচার করা রোগীরা ভালো আছেন। তাঁদের কোনো সমস্যা নেই।’

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বুধবার সকালে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সফর আলী কোভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এরপর বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, সফর আলী করোনা পজিটিভ। বিষয়টি রাতেই তাঁকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে নমুনা দেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সফর আলী দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে অন্তত আটটি প্রসূতি অস্ত্রোপচার করেন। দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফটকসংলগ্ন তিনটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করেছেন। এ ছাড়া তিনি ঝাউদিয়া বাজার ও আল্লাদরগা বাজার এলাকার ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করেন।

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মায়ের হাসি ক্লিনিকের মালিক সায়েম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ও রাত ৯টায় দুবার চিকিৎসক সফর আলী এ ক্লিনিকে দুজন প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন। এসব মা ও শিশু সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কোভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়ার পর তাঁর অস্ত্রোপচারে আসা ঠিক হয়নি।

আরও দুটি ক্লিনিক ও স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সফর আলী গোপালগঞ্জে কর্মরত থাকলেও প্রায় সময় দৌলতপুরে থাকেন। দৌলতপুরে বিভিন্ন ক্লিনিকের সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ।

শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ কলেজে নির্দিষ্ট কয়েক দিন দায়িত্ব পালনের পর চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) পাঠানো হয়। সেটা হোটেল বা বাসায় হয়ে থাকে। সফর আলী বাসায় গিয়ে থাকলেও তাঁর কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত ছিল। আর নমুনা দেওয়ার পর কোনোভাবেই প্রসূতি অস্ত্রোপচার করা ঠিক হয়নি। এটা তিনি করতে পারেন না।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ওই সব মা ও শিশু এবং ক্লিনিকগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।