রাজবাড়ীতে বাড়ছে অনলাইন ক্লাস

রাজবাড়ীতে অনলাইন স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন রেহেনা পারভীন নামের এক শিক্ষক। ছবি: সংগৃহীত
রাজবাড়ীতে অনলাইন স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন রেহেনা পারভীন নামের এক শিক্ষক। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো রাজবাড়ীতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে চালু করা হয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এখন বাড়িতে বসে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। দিন দিন এই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নেওয়া এই সব অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয় না।


রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ীতে মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৪৬টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ৮২ হাজার ২৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদান করেন ১ হাজার ৮৬৭ জন শিক্ষক। অপর দিকে মাদ্রাসা আছে ৭৩টি। মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ হাজার ২০২ জন। মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন ১ হাজার ২০২ জন। এ ছাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ আছে ৪টি। এতে ১৫৫ জন শিক্ষক ৩ হাজার ৯৩৪ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করেন। এ ছাড়া রয়েছে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

রাজবাড়ীতে ১৮ এপ্রিল থেকে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমে যুক্ত আছেন মোট ৬০ জন শিক্ষক। ইতিমধ্যে ৩৫ জন শিক্ষকের পাঠদান অনলাইনে যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৩৫০টি শ্রেণিপাঠ অনলাইনে দেওয়া (আপলোড করা) হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসার বিষয়ে নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে। লাইভে পাঠদানের পর তা ইউটিউবে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ইচ্ছেমতো সময়েও শিক্ষার্থী তা দেখতে পাচ্ছে।

এ ছাড়া এককভাবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষক যুক্ত রয়েছেন রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের ব্যানারে প্রতিদিন অনলাইন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। লাইভ ক্লাস নেওয়ার পর তা ইউটিউবে আপলোড করা হচ্ছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোক্তা সহকারী শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার দাস। বিদ্যালয়ের ৩৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ২১ জন শিক্ষক এতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পাঁচটি ও অন্য দিনগুলোতে তিনটি ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

প্রদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বের জায়গা থেকেই অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চালু করি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নিয়ে অনলাইনে মতবিনিময় সভাও করেছি। তবে গ্রামের দিকের শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সমস্যার কারণে সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল রাজবাড়ী কেব্‌ল নেটওয়ার্কের (আরসিএন) মাধ্যমে ক্লাস দেখাতে পারলে শিক্ষার্থীদের জন্য খুব ভালো হতো।’
বালিয়াকান্দি উপজেলার লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক বেলাল উদ্দিন আহম্মেদের উদ্যোগে সেখানে অনলাইন স্কুল শুরু হয়। বেলাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে আছে। তাদের স্বাভাবিক পড়ালেখায় ব্যাঘাত হচ্ছে। এরপর আমার অনলাইন স্কুলের বিষয়টি মাথায় আসে। শিক্ষা কর্মকর্তা ইকবাল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি ব্যাপক উৎসাহ দেন। সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস পাই স্যারের কাছ থেকে। মূলত স্যারের অনুপ্রেরণাতেই স্কুলটি এই অবস্থানে এসেছে। প্রথমে সপ্তাহখানেক আমি একাই ক্লাস নিতাম। এখন অনেক শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। প্রতিদিনই শিক্ষার্থী বাড়ছে।’

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস করার মতো পর্যাপ্ত সুবিধা এখনো গড়ে ওঠেনি। বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে শিক্ষকদের কাজ করতে হচ্ছে। রাজবাড়ীতে একটি অনলাইন স্কুল থাকা প্রয়োজন। স্বাভাবিক সময়েও বেলা তিনটার পর থেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা গেলে কোচিং ব্যবসার প্রভাব কমবে। ইন্টারনেটের দাম কমানো প্রয়োজন। এ ছাড়া স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রদর্শন করানোর জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) কাছে অনুরোধ করেছি।’

রাজবাড়ী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম এবং একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী ফয়সাল শেখ বলে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কলেজ বন্ধ রয়েছে। পড়ার চাপ না থাকায় বাড়িতে পড়তে ইচ্ছা করে না। দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সময় বেশি চলে যায়। এখন অনলাইনে ক্লাস হওয়ায় পড়াশোনায় কিছুটা মনোযোগ এসেছে।
ডা. আবুল হোসেন কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তারের মেয়ে রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একজন অভিভাবক হিসেবে তাঁর মন্তব্য হচ্ছে, পরিস্থিতি যত দিন স্বাভাবিক না হবে, তত দিন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে নিয়মিত এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালানো উচিত। সরকার সংসদ টিভি চালু করেছে, বিদ্যুতের অভাবে অনেকে তা দেখতে পায় না। টাকা নিয়ে অনলাইনে কোচিং করানোর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগে অনেক শিক্ষক অনলাইনে গ্রুপ করে কোচিং করাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, অনেক শিক্ষক অনলাইনে কোচিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এই দুঃসময়েও অনলাইনে ক্লাস নিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি কষ্টদায়ক।