স্বাস্থ্যবিধি মেনে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করতে পারবেন: সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট

স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক-সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের আলোচনার পর ওই সিদ্ধান্ত হয়। 

‘চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি অথবা ব্যক্তিদের আত্মসমর্পণ–সম্পর্কিত প্র্যাকটিস (ব্যবহারিক) নির্দেশনা বিষয়ে আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা যায়।

প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এজলাস কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ আবেদন দাখিল এবং শুনানি কার্যক্রমের পদ্ধতি ও সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ ও সমন্বয় করতে হবে, যাতে আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালত ভবনে কোনোরূপ জনসমাগম না ঘটে। আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাস কক্ষে প্রত্যেককে কমপক্ষে ছয় ফুট শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের জনসমাগম পরিহার করতে হবে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ এবং আদালত ভবনে জনসমাগম এড়াতে প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানির জন্য গ্রহণ করবেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এ–সংক্রান্ত একটি তালিকাসংবলিত বিজ্ঞপ্তি আদালত এবং আইনজীবী সমিতির নোটিশ বোর্ডে প্রচারের ব্যবস্থা করবেন।
একটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সর্বোচ্চ দুইজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এজলাস কক্ষে একত্রে ছয়জনের বেশি লোকের সমাগম করা যাবে না। তবে একই মামলায় একাধিক আত্মসমর্পণকারী অভিযুক্ত ব্যক্তি থাকলে এজলাস কক্ষের ডকে সর্বোচ্চ পাঁচজন অভিযুক্ত ব্যক্তি অবস্থান করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট ওই ধরনের মামলা একাধিক ভাগে/সেশনে শুনানি করতে পারবেন এবং সম্পূর্ণ শুনানি সম্পন্ন করে আইনানুগ আদেশ প্রদান করবেন। মামলা শুনানির সময় এজলাস কক্ষের বাইরে আদালতের বারান্দায় বা করিডরে জনসমাগম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানির সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাঁর পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী ছাড়া অন্য কোনো আইনজীবী এজলাস কক্ষে অবস্থান করবেন না। একটি আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর এজলাস কক্ষ ত্যাগ করার পর ম্যাজিস্ট্রেট পরবর্তী আত্মসমর্পণের দরখাস্ত শুনানি করবেন। এজলাস কক্ষে প্রত্যেককে আবশ্যিকভাবে মুখাবরণ (ফেস মাস্ক) পরিহিত অবস্থায় থাকতে হবে। আদালতে প্রবেশের সময় প্রত্যেক ব্যক্তির তাপমাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। এজলাস কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে বজায় নিশ্চিতে তাৎক্ষণিক উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানি করা থেকে বিরত থাকাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

প্র্যাকটিস নির্দেশনাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আদালতের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনাক্রমে উল্লিখিত বিষয়ে পূর্ণ সহায়তার জন্য আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বর্ণিতমতে স্বাস্থ্যবিধিসহ শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ নিশ্চিতকরণের নিয়মাবলি প্রতিপালনসহ সার্বিক পরিস্থিতিসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে [email protected] ই–মেইলের মাধ্যমে পাঠাবেন। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ প্রদান না করা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।