বিয়ের ভোজ বাতিল করে স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে চিকেন টোস্ট। জর্দা থেকে কোমল পানীয়। একেবারে পুরোপুরি বিয়ের ভোজ। তবে এই চিত্র কোনো বিয়েবাড়ি কিংবা কমিউনিটি সেন্টারের নয়। এই অন্য রকম আয়োজনের সাক্ষী ছিল চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল। ‘বরযাত্রীরাও’ আবার বর কিংবা কনের আত্মীয় নন। তাঁরা সবাই করোনাকালে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী আর তাঁদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাওয়া চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।

এই বর ও কনের চার হাত এক হয়েছে অবশ্য সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে। কেবল ভোজটাই হলো চট্টগ্রামের এই হাসপাতালে। বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠান বাতিল করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে হাসি ফোটানোর এই আয়োজন বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

বহু বছর আগ থেকেই পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন সন্দ্বীপের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কাদের চৌধুরী। তাঁরই বড় কন্যা ফাইজা চৌধুরী। স্নাতকোত্তর শেষে নিউইয়র্কে অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনায় থাকা এই তরুণীর বিয়ে হয়েছে মোহাম্মদ রাহিল মহিউদ্দিন নামের এক তরুণের সঙ্গে। রাহিলের জন্ম, বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে হলেও তাঁর মা-বাবার নাড়ি পোঁতা আছে ভারতের হায়দরাবাদে।

আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা যুক্তরাষ্ট্রে হলেও চট্টগ্রামেও হবে ভোজ। কারণ, কনের আত্মীয়স্বজনের বিশাল একটা অংশের বাস যে এই শহরে। সে অনুযায়ী চট্টগ্রামের আত্মীয়স্বজনদের জন্য আয়োজনের দায়িত্ব পড়েছিল কনের মামা আরিফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর কাঁধে। কিন্তু এই দুঃসময়ে সেই ‌‘ভূরিভোজের’ আয়োজন বাতিল করে পুরো টাকাই খরচ করা হলো রোগী, চিকিৎসক, নার্স, আয়া ও অন্য কর্মীদের খাবারের পেছনে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় কনের আত্মীয়স্বজনদের ব্যস্ততা। কেউ দৌড়েছেন চট্টগ্রাম ক্লাবে খাবার আয়োজনের তদারকি করতে, আবার কেউ খাবার নিয়ে ছোটেন মা ও শিশু হাসপাতালে।

ভিন্ন রকম এই আয়োজনের পেছনের গল্পটা শোনা যাক আরিফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর মুখ থেকেই। এই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল ভাগনির বিয়ে উপলক্ষে চট্টগ্রামে অবস্থান করা আত্মীয়স্বজন একত্র হব। সবাই একসঙ্গে খাব। কিন্তু এই দুঃসময়ে তো এমন আনন্দ মানায় না। তাই আমি আর আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলাম, এই টাকায় ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে কাজ করে যাওয়া চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের খাওয়াব। কারণ, এখন তো চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরাই আমাদের স্বজন। তাঁদের খাওয়ানো মানে তো স্বজনকে খাওয়ানোরই তৃপ্তি। তাই সেই সিদ্ধান্তের কথা ভগ্নিপতি আর বোনকে জানাই। তাঁরাও এক কথাতেই রাজি হয়ে যান।’

আরিফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায় তাঁর ভাগনি ও ভাগনিজামাইয়ের আকদ অনুষ্ঠান হয়েছে। সে অনুযায়ী গতকাল দুপুরে ৬০০ এবং রাতে ৩৫০ জনের খাবার মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও একই উপলক্ষে চার দিনের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকার খাবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়। একইভাবে খাবার দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালেও। সব মিলিয়ে এসব আয়োজনে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করেছেন।

এভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করে রোগী আর স্বাস্থ্যকর্মীদের খাওয়ানোর বিষয়টি থেকে অন্যরাও উৎসাহিত হবেন বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হক।