করোনাকালে তরুণদের হাতে বই তুলে দিচ্ছেন তিনি

আলোকিত সখীপুর উপজেলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তরুণদের মধ্যে বই বিলি করেন শাহ আলম সাজু। ছবি: প্রথম আলো
আলোকিত সখীপুর উপজেলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তরুণদের মধ্যে বই বিলি করেন শাহ আলম সাজু। ছবি: প্রথম আলো

আলোকিত সখীপুর উপজেলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বই বিলিয়ে যাচ্ছেন শাহ আলম সাজু। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে তরুণদের ঘরমুখী করার জন্যও বই হাতে তুলে দিচ্ছেন তিনি। তরুণদের মধ্যে মুঠোফোনের আসক্তি কমিয়ে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে তাঁর এ উদ্যোগ টাঙ্গাইলের এই উপজেলার বিভিন্নজনের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

শাহ আলম সাজু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে সামাজিক দূরত্ব মেনে তরুণদের একত্র করে বই বিলিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গড়ে ওঠা পাঠাগারেও তিনি বই দিয়েছেন। তাঁর এই মহৎ উদ্যোগে উপজেলার তরুণদের মধ্যে বই পড়ার আনন্দ ও উৎসাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

শাহ আলম সাজুর পৈতৃক বাড়ি উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তিনি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ বিনোদন প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লেখালেখি তাঁর পেশা ও নেশা। গত ২২ বছরে তাঁর ৪৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি উপন্যাস ও ৫টি গল্পের বই।


শাহ আলম সাজু বলেন, ‘অরাজনৈতিকভাবে আমার নিজের উপজেলার, বিশেষ করে তরুণদের বইমুখী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক শ তরুণের হাতে বই তুলে দিয়েছি।’ তিনি জানান, কালিয়া ইউনিয়নের প্রতিটি বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীর হাতে তিনি ইতিমধ্যে বই তুলে দিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্কুলেও নিজে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দিয়েছেন।


স্বপ্নছোঁয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সাদমান সাদী বলেন, ‘আমার বইয়ের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে ছোটবেলা থেকেই। আর বইটা যদি প্রিয় মানুষের হাত থেকে পাওয়া যায়, তবে দুর্বলতাটা ভালোবাসায় রূপান্তর হয়ে অনুপ্রেরণা জোগান দেয়। শাহ আলম সাজুর হাত থেকে বই পেয়ে দারুণ ভালো লাগছে। আমার জানামতে, বই পেয়ে অনেক তরুণের মধ্যে বই পড়ার উৎসাহ তৈরি হচ্ছে।’

শাহ আলম সাজুর উদ্যোগে উপজেলার তরুণদের মধ্যে বই পড়ার আনন্দ ও উৎসাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। ছবি: প্রথম আলো
শাহ আলম সাজুর উদ্যোগে উপজেলার তরুণদের মধ্যে বই পড়ার আনন্দ ও উৎসাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। ছবি: প্রথম আলো

শাহ আলম সাজু জানান, শুধু করোনাকালে বিভিন্ন এলাকার তরুণদের হাতে তিনি প্রায় ৫০০ বই তুলে দিয়েছেন। তরুণেরা বই পড়ছে কি না, সে খোঁজখবরও রাখছেন। তাঁর নিজের লেখা বই ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলনসহ বিখ্যাত লেখকদের বই তুলে দিচ্ছেন। উপজেলার বেশ কয়েকটি পাঠাগারে বই উপহার দিয়েছেন। তিনি চান সখীপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে যেতে এবং অল্প পরিসরে হলেও তরুণদের হাতে বই তুলে দিতে।


শাহ আলম বলেন, ‘পলান সরকার আমার আদর্শ। পলান সরকারের মতো আমি ঘরে ঘরে গিয়ে তরুণদের হাতে বই পৌঁছে দিতে চাই।’


শাহ আলম সাজুর ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা করে হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, শাহ আলম সাজু একজন তরুণ উদীয়মান লেখক ও সাংবাদিক। তাঁর উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। তরুণেরা মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা বই পড়তে চাইছে না। করোনাকালে তরুণদের হাতে বই তুলে দিয়ে তরুণদের ঘরমুখী করার উদ্যোগে পুরো সমাজ উপকৃত হবে।


উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল বলেন, ‘তরুণদের ঘরমুখী ও বইমুখী করতে ও আলোকিত সখীপুর গড়ার লক্ষ্যে শাহ আলম সাজুর উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। আমি তাঁর এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’