তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সারা দেশে ৬২ হাজার ৯৬ জন গ্রাহক বিদ্যুতের অতিবিলের শিকার হয়েছেন। এ জন্য ২৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত টাস্কফোর্স। আজ রোববার দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের সবার বিষয়ে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ-সচিব সুলতান আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে আমাদের রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে পারেননি। এ জন্য এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির মাঠপর্যায়ে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৬০১ জন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন বিদ্যুৎ-কর্মী মারা গেছেন।’

সারা দেশে ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ ওঠায় তিন মাস ধরেই নানামুখী সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ টাস্কফোর্স গঠন করে। এরপরই বিতরণ কোম্পানিগুলোও নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে এদের কেউ কেউ এখনো দায়ীদের চিহ্নিত করে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বলা হচ্ছে এখনো কাজ চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের জন্য গ্রাহকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে সুলতান আহমেদ বলেন, ‘আমরা সব সময়ই গ্রাহকবান্ধব। আমরা যে আস্থা হারিয়েছি, আশা করছি শিগগিরই পুনরুদ্ধার করতে পারব। ভবিষ্যতে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ ধরনের সংকট সমাধানে মিটার রিডিং না নিয়ে বিল করবে না। ইতিমধ্যে জুন মাসে শতভাগ মিটার রিডিং নিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।’

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সচিব বলেন, আরইবি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে। এখন তাদের তদন্ত চলছে। দায়ীদের খুঁজে বের করে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে প্রতিষ্ঠানটি।

ডিপিডিসি অতিরিক্ত বিলের অভিযোগে ৩৬টি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নেটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর বাইরেও ১৩ জন মিটার রিডার এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নেসকো ২ জন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করেছে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করেছে। ওজোপাডিকো ২২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করছে সারা দেশে ৬২ হাজার ৯৬ গ্রাহকের অতিরিক্ত বিল এসেছে। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ২ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১১ জন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৫ হাজার ৬৫৭ জন, নর্দার্ন ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ১৫ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ২ হাজার ৫২৪ জন, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৫৫৬ জন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৮২ জন এ রকম অতিরিক্ত বিল পেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার সেলের মহাব্যবস্থাপক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসাইন ছাড়াও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।