ভৈরবে সংক্রমণ কমেছে, নাকি ফির জন্য নমুনা দিচ্ছে না মানুষ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গত জুন মাসে ৩৯৩ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ওই মাসে দিনে গড়ে সংক্রমিত হন ১৩ জনের বেশি করে। এ মাসে করোনায় মারা যান নয়জন। এদিকে চলতি জুলাই মাসের প্রথম তিন দিনে করোনা শনাক্তের সংখ্যা মাত্র তিন। অর্থাৎ চলতি মাসে দিনে গড়ে মাত্র একজন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। এ মাসে উপজেলায় করোনায় কোনো মৃত্যু নেই।

আগের মাসে করোনা রোগী দ্রুত বাড়ার পর এই মাসের প্রথম দিন থেকে বিপরীত চিত্রে অনেকটা স্বস্তিতে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ভৈরবে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন গত ১০ এপ্রিল। থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) প্রথম শনাক্ত ওই ব্যক্তি। এরপর থেকে পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। মার্চ মাসে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন ৪৬ জন। এপ্রিলে সেই হার দ্বিগুণের বেশি হয়ে শনাক্ত হন ১১৭ জন। এপ্রিলেই উপজেলায় প্রথমবারের মতো করোনায় একজন মারা যান।

জুন মাস ছিল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন। আগের মাসের চেয়ে সংক্রমিত সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়ে যায়। এ মাসে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯৩। এ মাসে নয়জন মারা গিয়ে মৃত্যু বাড়ে নয় গুণ। পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থায় সংক্রমিতের সংখ্যা শূন্য দিয়ে পরের মাসের (জুলাই) প্রথম দিনের সূচনা হয়। দ্বিতীয় দিনে করোনা সংক্রমিত শনাক্ত হন মাত্র একজন এবং তৃতীয় দিনে শনাক্ত হন দুজন। চতুর্থ দিনের নমুনার ফল এখনো জানা যায়নি। তবে এ মাসে সংক্রমিত তিনজন শনাক্ত হয়েছেন ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে। অর্থাৎ পরীক্ষাকৃত নমুনার মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ মানুষ করোনা পজিটিভ হচ্ছে এখন।

জুলাই মাসের শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ কমার সাফল্যের পেছনে লকডাউনকে এগিয়ে রাখছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে আরও কয়েকটি উদ্যোগ থেকে সুফল আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, এই রোগ ঠেকানোর মূল ব্যবস্থা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। লকডাউন যদি ৫০ ভাগও কার্যকর হয়ে থাকে, তাহলে সেটির ইতিবাচক ফল বর্তমান চিত্র। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষা, প্রতিরোধ ও সহায়তা কর্মসূচিতে গতি আনা, কোয়ারেন্টিন-আইসোলেশন নিশ্চিতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ফল দিচ্ছে। তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন গৃহীত উদ্যোগে শৈথিল্য এলে ফের সর্বনাশ নেমে আসতে পারে।

জানা গেছে, আগে নমুনা দিতে আসা লোকজনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বেশির ভাগ ব্যক্তি নিজের মতোই চলাফেলা করতেন। আবার নমুনা দেওয়ার এক সপ্তাহের আগে ফল জানার সুযোগ ছিল না। মাঝের এক সপ্তাহের সময়টি ছিল খুবই স্পর্শকাতর। এই সময় সংক্রমিত ব্যক্তি আরও অসংখ্য ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে তবেই তিনি আলাদা হতেন। ১০ দিন আগে থেকে এই নিয়মে কঠোরতা আনা হয়। বর্তমানে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব নমুনা দেওয়ার দিন থেকে ব্যক্তির ওপর নজরদারি করছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছে এবং ফল জানার আগ পর্যন্ত সন্দেহভাজন রোগীর বাড়িতে থাকা নিশ্চিত করছে।

একই সঙ্গে ফল পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতায় এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। আগে ফল জানতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হলেও এখন নমুনা দেওয়ার দিনেই অথবা এক দিনের মধ্যেই রিপোর্ট জানা যাচ্ছে। কিশোরগঞ্জ ল্যাবে দুই শিফটে পরীক্ষা হওয়ার কারণে এই উন্নতি হয়েছে। সামাজিক সংক্রমণ রোধে দ্রুত ফল প্রকাশকে বড় নিয়ামক হিসেবে ভাবা হচ্ছে।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন স্থানীয়দের অনেকে। তাঁদের ধারণা, জুন মাসে নমুনার গড় সংগ্রহ ছিল ৭০। ফলে সংক্রমিতও বেশি বের হয়ে আসে। জুলাই মাসে নমুনা দেওয়ার মাত্রা অনেক কমে যায়। সংক্রমণ কম আসার পেছনেও এটি কারণ হতে পারে।

বিশেষ করে সরকারি নির্দেশনায় ১ জুলাই থেকে বুথে নমুনা দিলে জনপ্রতি ২০০ টাকা এবং বাড়িতে থেকে দিলে ৫০০ টাকা ফি যোগ করে। ফি যুক্ত করার পর নমুনা গ্রহণ কেন্দ্র ট্রমা সেন্টারে লোকজনের ভিড় কমে যায়। প্রথম তিন দিনে নমুনা সংগ্রহ হয় মাত্র ৭৫ জনের।

নিরাপদ সড়ক চাই ভৈরব শাখার সভাপতি এস এম বাকী বিল্লাহ বলেন, দেখতে হবে সংক্রমণ কমে যাওয়ার পেছনে নমুনা কম হওয়া কারণ কিনা, নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, উপসর্গ থাকার পরও ট্রমা সেন্টারমুখী না হলে পরবর্তী সময়ে আরও বড় সর্বনাশ অপেক্ষা করবে।