মহাসড়কে চলছে ধান ও খড় শুকানো, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে খড় ও ধান শুকানো। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আজ রোববার বরাতি এলাকা থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে খড় ও ধান শুকানো। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আজ রোববার বরাতি এলাকা থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে ধানমাড়াই। সড়কের ওপর শুকানো হচ্ছে ধান ও খড়। এতে সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে যানবাহনের চালক ও সচেতন ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন।

ওই সড়কের বাসচালক জাহিনুর ইসলাম বলেন, তারাগঞ্জ উপজেলায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান দখলে নিয়ে ধান ও খড় শুকানোয় নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে ধানের ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে বাস চালানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এতে সময়ের অপচয় হচ্ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও।
বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কটি একটি ব্যস্ততম সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুর জেলার মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। এক মাস ধরে সড়কটির তারাগঞ্জ উপজেলার ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থান ধানমাড়াই, খড় ও ধান শুকানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আজ রোববার সকালে সড়কটির চিকলী, খিয়ারজুম্মা, বরাতি, বামনদিঘী, বালাবাড়ি, শলেয়া পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, মাঠ থেকে ধান নিয়ে এসে সড়কের মধ্যে ফেলা হচ্ছে। কোথাও সড়কের এক পাশে কল বসিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। কোথাও মহাসড়কের দুই পাশে ধান শুকানো হচ্ছে, কোথাও খড়। এ কারণে সংকুচিত মহাসড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
তারাগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ওই সড়কের বাসচালক মিনাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মানুষ মরলে ড্রাইভারদের ধরেন। সউগ দোষ ড্রাইভারের করেন। কিন্তু সড়কের ওপর যে অবৈধভাবে ধান শুকানো হওছে, তাক তো কায়ও কওছেন না। সড়কের দুই পাশে ধান শুকায় হামার গাড়ি চালাইতে খুব কষ্ট হওছে। ভয় ভয় করি, ধীরে ধীরে গাড়ি চালবার নাগোছে। এতে হামার সময় নষ্ট হওছে।’
ওই সড়কে যাতায়াতকারী আরেক ট্রাকচালক মানিক মিয়া বলেন, সড়কের অর্ধেক অংশজুড়ে ধান শুকাতে দেওয়া হচ্ছে। ধান নেড়ে দেওয়ার সময় অনেকে গাড়ির সামনে এসে যায়। হর্ন দিলেও শোনে না। নিষেধ করলে মানে না, উল্টাপাল্টা কথা বলে। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে ধানমাড়াই। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আজ রোববার বরাতি এলাকা থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে ধানমাড়াই। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আজ রোববার বরাতি এলাকা থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

বরাতি এলাকায় মহাসড়কের ওপর ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন বালাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ মোছলেমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘স্যার, আস্তাত (রাস্তায়) ধান না শুকি করব কী কন? বাড়িত কিছু জায়গা আছে। কিন্তু ভিজা, ধান শুকা যায় না। আস্তাত তাড়াতাড়ি ধান শুকি যায়। ওই জন্যে ধান নিয়া আস্তাত আলছি (এসেছি)।’
ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে ধান নেড়ে দিচ্ছিলেন মেনানগর গ্রামের কৃষক আনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবার বাজারে দাম থাকলেও ধান নিয়া খুব যন্ত্রণায় আছি। ধান কাটা–মাড়াইয়ের শুরু থাকি প্রত্যেক দিন পানি হওছে। সকাল বিকাল দ্যাওয়া নাগায়। বাড়িত পাকা জায়গা নাই। ওই জন্যে সড়কোত আলছি। সড়ক কোনা কাছ না হইলে হামরা ধান নষ্ট হয়া গেল হয়।’
এভাবে সড়কে ধান শুকানো ও মাড়াইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে ধান শুকানো ঠিক নয়। এ কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। শিগগিরই এসব বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’