সখীপুরে ধান সংগ্রহ শূন্যের কোঠায়, ৪৮ দিনে সাড়া মাত্র এক কৃষকের

টাঙ্গাইলের সখীপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত ৪৮ দিনে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের লটারিতে বিজয়ী ৮৯৫ জন কৃষকের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র একজন কৃষক গুদামে এসে ৭০ মণ (প্রায় ৩ মেট্রিক টন) ধান বিক্রি করে গেছেন। অথচ উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন।

গত ১৮ মে থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধান সংগ্রহের সময়সীমা আগামী ৩১ আগস্ট। গত ৪৮ দিনে এখানে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র প্রায় ৩ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। সময়সীমা প্রায় অর্ধেক ফুরিয়ে গেছে। বাকি অর্ধেক সময়ে ওই ধান কীভাবে সংগ্রহ হবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, করোনাকালের পর খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে কৃষকেরা সরকারি গুদামে তো দূরের কথা, হাটবাজারেও ধান বিক্রি করছেন না। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ধান মজুত করে রাখছেন। আমন ধান ঘরে আসার সময়ের ঠিক আগে আগে তাঁরা মজুতকৃত ধান বিক্রি করবেন।

এ ছাড়া কৃষকেরা হাটে ধানের ভালো দামও পাচ্ছেন। এতে খাদ্যগুদামে আর্দ্রতা ও ওজন মাপা, পরিবহন খরচ, ব্যাংক চেকে টাকা পাওয়া—এসব নানা ঝামেলার কারণে খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে আসতে তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে সরকারের ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা ও প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকা। এ দামে উন্মুক্ত লটারিতে বিজয়ী তালিকাভুক্ত ৮৯৫ জন কৃষকের প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন করে ধান বিক্রয় করতে পারবেন।

চলতি বছরের ১৮ মে থেকে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হয় এবং তা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। অথচ গতকাল রোববার পর্যন্ত উপজেলার খাদ্যগুদামে মাত্র একজন কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ৭০ মণ ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।

উপজেলার সানবান্দা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, একবার রোদে ধান শুকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি মণ ধান ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকা দামে বাড়ি থেকেই বিক্রি করা যায়। কিন্তু খাদ্যগুদামে এই ধান বিক্রি করতে হলে তিনবার রোদে শুকাতে হবে। ধানের আর্দ্রতা সঠিক আছে কি না, তা দেখতে নমুনা নিয়ে কয়েকবার গুদামে যাওয়ার ঝামেলা, পরিবহন খরচ—এসবের কারণেই এখানকার কৃষকেরা তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছেন না।

উপজেলার গড়গোবিন্দপুর গ্রামের ধান-চাল ব্যবসায়ী মফিজ তালুকদার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম বেড়েছে। তা ছাড়া বাজারে চালের দামও কিছুটা বেশি। কৃষকেরা ঝামেলার কারণেই গুদামে ধান বিক্রিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে কৃষকেরা হাটেও ধান বিক্রি করছেন না। তাঁরা বাড়িতে ধান মজুত করে রাখছেন। আমন ধান পাওয়ার আগে আগে তাঁরা মজুতকৃত ধান বিক্রি করবেন বলে অনেক কৃষকের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন।

সখীপুর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ১৮ মে ধান সংগ্রহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের ঘোনারচালা গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ৭০ মণ ধান কেনা হয়েছিল। গত ৪৭ দিনে লটারিতে বিজয়ী তালিকাভুক্ত বাকি ৮৯৪ জন কৃষকের আর কেউ ধান বিক্রির কথা নিয়ে আমাদের খাদ্যগুদামে আসেননি। এ অবস্থায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছেন।’

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলম গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাটবাজারগুলোয় ধানের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি। পরিবহন খরচ বেশি হওয়া, ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা থাকলে ধান নেওয়া—এমন নানা দাপ্তরিক ঝামেলা পোহাতে স্থানীয় কৃষকেরা অভ্যস্ত নন। এসব কারণেই ধান গুদামে নিয়ে আসার জন্য কৃষকেরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মনিটরিং (তদারকি) কমিটির সভাপতি আসমাউল হুসনা প্রথম আলোকে বলেন, গত ৪৮ দিনে মাত্র একজন কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ৭০ মণ ধান কেনা হয়েছে। এতে বোঝা যায় কৃষকদের গুদামে ধান বিক্রিতে তেমন আগ্রহ নেই। এখনো দেড় মাস বাকি আছে। প্রয়োজনে লটারি বিজয়ীসহ সব কৃষককে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আর্দ্রতার বিষয়টিও শিথিলতায় আনা যেতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।