নেত্রকোনায় বন্যায় ভেসে গেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকার মাছ

নেত্রকোনায় বন্যায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন মাছচাষিরা। ছবি: প্রথম আলো
নেত্রকোনায় বন্যায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন মাছচাষিরা। ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার কলমাকান্দা সদরের চারপুর এলাকার বাসিন্দা নির্মল কর (৫০)। ধারদেনা করে এ বছর তিনি বাসাউড়া গ্রামে আট লাখ টাকা মাছের প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। বাদে আমতৈল গ্রামের মো. সাইফুল ইসলামও (৪২) একইভাবে নিজ গ্রামের খামারে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁদের। সেই স্বপ্ন ফিকে করে দিয়েছে বন্যা। কয়েক দিন আগের বন্যায় তাঁদের প্রকল্পের সব মাছ ভেসে গেছে। ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে দিশেহারা বোধ করছেন তাঁরা।

শুধু নির্মল কর বা সাইফুল ইসলামই নন, তাঁদের মতো এমন অনেকের স্বপ্নই ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বন্যার পানি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সারা জেলায় ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭০০ টাকার মৎস্য সম্পদ এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নেত্রকোনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ ৮৩ হাজার ৭০০ হেক্টর। তাতে মাছ উৎপাদন হয় ৮২ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় মাছের চাহিদা ৫২ হাজার মেট্রিক টন। আর ৩০ হাজার মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত। সপ্তাহখানেক আগে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ৩২৭ দশমিক ১০ হেক্টর জমিতে অন্তত ২ হাজার ৩০৮টি পুকুরের ৫৮০ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭০০ টাকা।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও আটপাড়া উপজেলায়। কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০৪টি, বারহাট্টার ২৮০টি এবং আটপাড়ায় ৩০০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক মৎস্যচাষি।

কলমাকান্দার বড়খাপন এলাকার মৎস্যচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তিনটি পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করি। বন্যার আশঙ্কায় পুকুরের পাড়ে জাল দিয়ে ঘের দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ঢলের তোড়ে জালের বেড়া তো টেকেইনি, পাড়ও ধসে গেছে। চোখের সামনে দিয়ে প্রায় চার লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’

মৎস সম্পদের এই ক্ষতি প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যায় মৎস্য সম্পদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রতি উপজেলা থেকে তথ্য নিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছি। ৫৮০ দশমিক ৪৭ টন মাছের ক্ষতি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বেশি।’

তিনি বলেন, মৎস্য সম্পদের ক্ষতি পুষিয়ে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।