আসামিরা ফোন বন্ধ করে ঢাকা ছেড়েছে তাই ধরা পড়ছে না: পুলিশ

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধার করা লাশ। ছবি: দীপু মালাকার
বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধার করা লাশ। ছবি: দীপু মালাকার

বুড়িগঙ্গার লঞ্চ ডুবিতে ৩৪ জনের মৃত্যুর আটদিন পরও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি নৌ-পুলিশ। সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত সাতদিন ধরে বারবারই বলে আসছেন, আসামি ধরার ব্যাপারে তাঁরা সব ধরনের চেষ্টাই চালাচ্ছেন। কিন্তু সফল হচ্ছেন না। আসামিরা সবাই মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে ঢাকা ছেড়েছে।

তবে বুড়িগঙ্গার লঞ্চ ডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলাম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। আমরা সোমবার সন্ধ্যার পর এই প্রতিবেদন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি।'

তবে তদন্তে কী তথ্য উঠে এসেছে, সে সম্পর্কে কিছুই জানাননি তদন্ত কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তবে বিআইডব্লিউটিএ এবং সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, বুড়িগঙ্গার লঞ্চ ডুবির ঘটনায় প্রকাশিত ভিডিও থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, ময়ূর-২ নামের লঞ্চটি সকল নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। লঞ্চডুবির ঘটনার দিন বেঁচে যাওয়া কমপক্ষে তিনজন প্রথম আলোকে জানান, ময়ূর-২ লঞ্চটি বেপরোয়া গতিতে মর্নিং বার্ডকে ধাক্কা দেয়। এই মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণী দায়ি ময়ূর-২ এর মাস্টারসহ অন্যরা। একই কথা বলেছেন বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, ময়ূর-২ লঞ্চের মাস্টারসহ অন্যরা সতর্ক থাকলে এত বড় নৌ-দুর্ঘটনা সংগঠিত হতো না। এতগুলো মানুষের মৃত্যু হতো না। এই মৃত্যুর জন্য দায়ি ময়ূর-২ লঞ্চ।'

এদিকে, গত আটদিনেও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনেরা। বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে মা ও বোনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রিফাত শেখ প্রথম আলোকে বলেন, 'সেদিন ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় আমাদের মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। আমি সেদিন বেঁচে গেলেও বুড়িগঙ্গায় ডুবে আমার মা ও বোন মারা যায়। লঞ্চ ডুবির আট দিন পার হয়ে গেল কিন্তু পুলিশ কোনো আসামি ধরতে পারল না। আসামিরা তো কেউ পেশাদার অপরাধী না। তাহলে কেন পুলিশ আসামিদের ধরতেছে না।'

নৌ-পুলিশের প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের তদন্তকাজ অব্যাহত রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

গত ২৯ জুন মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটিকে বুড়িগঙ্গায় ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চ। এ ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ময়ূর-২ নামের লঞ্চের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে নৌ-পুলিশ।

আট দিনেও আসামি গ্রেপ্তার না করার ব্যাপারে ঢাকা জেলা নৌ-পুলিশের প্রধান খন্দকার ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'আসামিরা সবাই মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। আসামিরা কেউ পেশাদার অপরাধী না। সাধারণত পেশাদার অপরাধীদের সম্পর্কে আগে থেকে তথ্য সংগ্রহ করা থাকে। ফলে সহজেই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। কিন্তু আসামিরা পেশাদার অপরাধী না হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করি, খুব শিগগির আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।'

লঞ্চ দুর্ঘটনায় পুলিশের করা মামলার এজাহারভূক্ত সাত আসামি হলেন, ময়ূর-২ এর মালিক আসামি মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ (৩২), লঞ্চের মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা (৬৫), জাকির হোসেন (৫৪), শিপন হাওলাদার (৪৫), শাকিল হোসেন (২৮), নাসির মৃধা (৪০) ও হৃদয় (২৪)। এদের মধ্যে বাশার দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার এবং জাকির হোসেন তৃতীয় শ্রেণীর মাস্টার।