রোগী ফেরতের অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ

সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট

চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফেরত নিয়ে রিটে উল্লেখিত অভিযোগ তদন্ত করে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

এর আগের আদেশ অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ৩০ জুন আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এর ভাষ্য, রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান নিশ্চিত না করার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

ওই প্রতিবেদন দাখিলের পর সেদিন রিট আবেদনকারী পক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৬ জুলাই পরবর্তী দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে করা রিট ও পৃথক সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ আদালত নির্দেশনাসহ ওই আদেশ দেন।

একই সঙ্গে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা যাতে চিকিৎসা-সম্পর্কিত অভিযোগ অনলাইনের মাধ্যমে জানাতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অক্সিজেনের সিলিন্ডারের দাম ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসছে ২২ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত।

আদালত বলেছেন, ক্যানসার ও কিডনি সমস্যার মতো জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা তাদের ফলোআপ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এমন রোগে আক্রান্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ৩৬/৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড পরীক্ষা করে রিপোর্ট সরবরাহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলো। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায়ের বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করতে পারবেন। এসব অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে গত জুনে পৃথক পাঁচটি রিট দাখিল করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালের ‘আইসিইউ বেড অধিগ্রহণ’, চিকিৎসায় পর্যাপ্ত হাই ফ্রো-নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহ, হাসপাতাল থেকে সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়ার বৈধতা নিয়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ না নিতে এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে এসব রিট করা হয়।

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে করা পাঁচটি রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি নিয়ে ১৫ জুন হাইকোর্ট অভিমতসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে আবেদন করে। পরদিন চেম্বার কোর্ট তিন দফা নির্দেশনা বহাল রাখেন। বহাল থাকা নির্দেশনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জারি করা নির্দেশনা (১১ মে দুটি এবং ২৪ মে জারি করা একটি স্মারক) যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্যসচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি নির্দেশ রয়েছে। এ অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিবেদন ৩০ জুন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর আগে রোগী ভর্তি না করা, রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় এবং চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে রোগীর মৃত্যুর পৃথক তিনটি অভিযোগ তুলে ধরে ঢাকার একটি ও চট্টগ্রামের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২৯ জুন অপর রিটটি দাখিল করেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা জেবুল হাসান। আর আগের রিটের ধারাবাহিকতায় আবেদনকারীপক্ষ সম্পূরক আবেদন দেয়। এসবের ওপর শুনানি নিয়ে আদেশ দেওয়া হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তৌফিক সাজাওয়ার। পৃথক রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান, অনীক আর হক, মাহফুজুর রহমান মিলন, এ এম জামিউল হক ও এ কে এম এহসানুর রহমান।

পরে আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের করা রিট ও সম্পূরক আবেদনে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর ফেরত আসার ২২/২৫টি ঘটনা তুলে ধরা হয়। অন্য রিটেও এমন ঘটনা রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ঘটনা তদন্ত করে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।