ওয়ারি লকডাউন: দুই দিনে করোনা আক্রান্ত ১৭ জন

ফাইল ছবি: মাসুম আলী
ফাইল ছবি: মাসুম আলী

লকডাউনের মধ্যে গত শনিবার ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী বুথে করোনা পরীক্ষায় নমুনা দিয়েছিলেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ৭ জন। পরদিন নমুনা দিয়েছেন ১৯ জন, করোনা পজিটিভ ১০ জনের। আজ সোমবার আরও ১৬ জন নমুনা দিয়েছেন। বুধবার এ ১৬ জনের ফল দেওয়া বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের সংশ্লিষ্টরা।

পুরান ঢাকার ওয়ারী লকডাউন এলাকার কন্টোল রুমের দায়িত্বে রয়েছেন ডিএসসিসির অঞ্চল-৫ এর সমাজ কল্যাণ দপ্তরের প্রশিক্ষক নূরুর ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেলে তার ইমেইলে করোনা পরীক্ষার ফল পাঠিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। যাদের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে, তাদের ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল ও নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন বাসায় চিকিৎসা নিবেন বলে জানিয়েছেন। সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত শনিবার ভোর ছয়টা থেকে ওয়ারী লকডাউন শুরু হয়। তার আগে লকডাউন এলাকায় ৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখানে লক্ষাধিক মানুষের বাস। করোনা প্রতিরোধে আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত ওয়ারীতে লকডাউন চলবে।

আজ সোমবার কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে ওয়ারী লকডাউন তৃতীয় দিন পার করল। জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত ছাড়া কাউকে বের হতে বা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভেতরের রাস্তাঘাট ফাঁকা। ফার্মেসি, সুপার শপ ছাড়া বাকি সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

গত ৩০ জুন ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন), লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‌্যাংকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট লকডাউনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ওয়ারী থানা পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, স্থানীয় ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী এই লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ওয়ারীর ওই এলাকাগুলোতে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ওয়্যার স্ট্রিটে এবং র‌্যাংকিন স্ট্রিটে পৃথক দুটি ফটক রাখা হয়েছে। সেখানে শুধু জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের তাপমাত্রা মেপে ভেতরে ঢুকতে এবং বের হতে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। বাকিদের আটকে দিচ্ছেন। তবে আজ বিকেল তিনটার দিকে বলদা গার্ডেনের উত্তর পাশে একটি গলির মাথায় বাশের বেড়ার ছোট্ট ফাঁকা দিয়ে একজনকে ঢুকতে দেখা গেছে। পুলিশ দেখে ফেলায় ফের বেড়ার ওপর দিয়ে বের হয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান।

র‌্যাংকিন স্ট্রিটের এই ফটক সংলগ্ন ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফটকের সামনে বড় ব্যানার টানানো, লেখা 'জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকস্ট, অথবা স্বাদ-ঘ্রাণ না পাওয়া এই উপসর্গগুলোর কোনোটি দেখা দেয়, এই বিদ্যালয়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করুন।' ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির বারান্দায় করোনা পরীক্ষায় বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে করোনা নমুনা সংগ্রহ করছেন ব্রাকের হেলথ প্রোগ্রামের কর্মীরা। আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে এই বুথ পরিচালনা করছেন তারা।

জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যথাযথভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে তারা চেষ্টা করছেন। এই কার্যক্রমে ওয়ারীর মুরব্বিরাও সহযোগিতা করছেন।

সারোয়ার হাসান বলেন, ওয়ারীর নাগরিকেরা লকডাউনের মধ্যে থাকলেও তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ পেতে সমস্যা হচ্ছে না। অনলাইনের মাধ্যমে কিনে হোম ডেলিভারির সুযোগ রাখা হয়েছে। রোগীদের জন্য টেলিমেডিসিন সার্ভিস দিতে চালু আছে দুটি হটলাইন। এ ছাড়া এলাকার ভেতর নির্ধারিত ভ্যানে শাকসবজি, মাছ, মাংস ও পণ্য সামগ্রী কেনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্বপ্ন, আগোরা, মিনাবাজারসহ আরও কয়েকটি সুপার শপ খোলা রয়েছে।