কুলাউড়া, জুড়ীতে তিনটি সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়নি, দুর্ভোগ

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের উন্নয়নকাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। বটুলি এলাকা, জুড়ী, মৌলভীবাজার, ৬ জুলাই। ছবি: কল্যাণ প্রসূন-pic-road-02-05.07
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের উন্নয়নকাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। বটুলি এলাকা, জুড়ী, মৌলভীবাজার, ৬ জুলাই। ছবি: কল্যাণ প্রসূন-pic-road-02-05.07

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন কুলাউড়া-পৃথিমপাশা ও রবিরবাজার-টিলাগাঁও বাজার সড়কের উন্নয়নকাজের মেয়াদ পার হয়ে গেছে। এ ছাড়া, জুড়ী উপজেলার জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের কাজ সম্পন্নের আর মাত্র দুই মাস বাকি। অথচ তিনটি সড়কের অর্ধেক কাজও এখনো সম্পন্ন হয়নি। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

সওজ সূত্র জানায়, কুলাউড়া পৌর শহরের নবীন চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় চৌমোহনা থেকে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ঝিলেরপাড় পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং রবির বাজার থেকে টিলাগাঁও ইউনিয়নের টিলাগাঁও বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক রয়েছে। দুটি সড়কই দীর্ঘ দিন ধরে ভাঙাচোরা। সওজ অধিদপ্তর ওই দুটি সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণের উদ্যোগ নেয়। প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে যৌথভাবে এ কাজ পায় ‘ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন’ ও ‘স্পেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হয়। দুটি সড়কের কাজ সম্পন্নের কথা ছিল গত ৩০ জুন। প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কেরও দীর্ঘ দিন ধরে দুরবস্থা। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই সড়কটিরও প্রশস্ত ও মজুবতকরণের কাজ পায়। ওই সড়কে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬৯ কোটি টাকা। গত বছরের (২০১৯) ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের (২০২০) ৩১ আগস্টের মধ্যে কাজ সম্পন্নের কথা। কুলাউড়ার দুটি সড়ক দিয়ে উপজেলার রাউৎগাঁও, কর্মধা, পৃথিমপাশা, টিলাগাঁও ও হাজীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন উপজেলা সদরসহ মৌলভীবাজার জেলা সদরে চলাচল করেন। আর জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়ক দিয়ে উপজেলার জায়ফরনগর, সাগরনাল, গোয়ালবাড়ী ও ফুলতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ৫০ হাজার লোক উপজেলা সদরে চলাচল করেন। এ ছাড়া বটুলি শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন ধরনের মালামালবাহী গাড়ি চলাচল করে।

কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা সিপিবির উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোশারফ আলী বলেন, কুলাউড়ার দুটি সড়কের কাজে শুরু থেকেই ধীরগতি। কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে গত জানুয়ারি মাসে ভুক্তভোগী বিভিন্ন এলাকার লোক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কিন্তু তাতেও গতি বাড়েনি।

জুড়ীর ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ বলেন, জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের দুরবস্থার কারণে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাচল করে। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। তিনি দ্রুত সড়কটির কাজ সম্পন্নের দাবি জানান।

দুটি সড়ক দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সওজ অধিদপ্তরের জুড়ী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধর বলেন, কুলাউড়া-পৃথিমপাশা ও রবিরবাজার-টিলাগাঁও বাজার সড়কের কাজ ৪০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩০ শতাংশ। কাজ দ্রুত সম্পন্নের ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান গত ৩০ জুন মুঠোফোনে বলেন, ‘কাজে ধীরগতির বিষয়টি অস্বীকার করছি না। করোনা পরিস্থিতিতে বেশি সমস্যা হচ্ছে। তবে গত ১০-১৫ দিনে জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের সমাই বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার জায়গায় কাজের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আর কুলাউড়ার দুটি সড়কের মধ্যে কুলাউড়া-পৃথিমপাশা সড়কের তিন কিলোমিটার জায়গা পাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
আসাদুজ্জামান বলেন, সড়কগুলোর কাজে প্রচুর পাথর লাগে। কিন্তু এলসির মাধ্যমে পাথর সরবরাহ বন্ধ। ফলে সড়কগুলোর অবশিষ্ট অংশে পাথরের স্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সওজ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আলম মুঠোফোনে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সড়কগুলোর কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে আগে থেকে কিছু সমস্যা ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার এখন চলমান সব কাজের মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে দ্রুত এসব সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।