করোনাকালে সমালোচনা-কটূক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা-গ্রেপ্তার বেড়েই চলেছে

প্রতীকী  ছবি
প্রতীকী ছবি

মুঠোফোনে কলের খরচ বাড়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে লিখেছিল ১৪ বছর বয়সী মো. রফিক (ছদ্মনাম)। তারপর পোস্টটি মুছে ক্ষমা চেয়ে সে আরেকটি পোস্ট দেয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্থানীয় যুবলীগ নেতার করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।

একই আইনে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একই কেন্দ্রে আছে ১৫ বছর বয়সী মো. করিম (ছদ্মনাম)। অভিযোগ, সে ফেসবুকে মহানবী (সা.) ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। করিম বাড়ি জামালপুর জেলায়, ঘটনাটি গত মে মাসের। রফিক থাকত ময়মনসিংহের একটি গ্রামে, ঘটনাটি গত জুনের।

করিমের ঘটনায় পুলিশ স্নাতক-পড়ুয়া দুজন তরুণকেও গ্রেপ্তার করেছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখকসহ নানা শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষজনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখে, মন্তব্য করে বা ছবি শেয়ার দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। কোভিডকালে অনেক মামলা হয়েছে চিকিৎসা বা ত্রাণ নিয়ে সমালোচনা করার কারণে।

এসব মামলার সংবাদ খতিয়ে দেখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা এবং সমালোচনা ও ভিন্নমত দমনের আলামত স্পষ্ট হয়। এদিকে পুলিশের বছরওয়ারি হিসাব বলছে, এ আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার বেড়েই চলেছে। এমনকি কোভিডকালেও।

প্রথম আলো গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি জাতীয় পত্রিকা এবং কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১০৯টি মামলার খবর বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে ‘কটূক্তি’, ‘মানহানিকর বক্তব্য’, ‘বিকৃত ছবি শেয়ার’, ‘গুজব ছড়ানো’ আর ‘সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’-জাতীয় অভিযোগে।

অভিযোগ মূলত আসছে সরকার, সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতা অথবা সরকারের সিদ্ধান্ত-কাজকর্মের সমালোচনামূলক পোস্ট, সংবাদ বা ছবি নিয়ে। প্রায় ৯০ ভাগ মামলার বাদী পুলিশ আর সরকারি দলের চৌহদ্দিতে থাকা নেতা-কর্মীরা। পেশাজীবী হিসেবে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন সাংবাদিকেরা।

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও সাংবাদিকতার শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আইনটা প্রণয়নের সময়ই কিছু ধারা সংশোধন করতে বলা হয়েছিলে। কিন্তু করা হয়নি। এখন তো দেখা যাচ্ছে যে কাউকে মামলায় দেওয়া হচ্ছে।

দেশে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে করা অপরাধ দমন, প্রতিরোধ ও বিচারের জন্য ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন হয়। ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে ৫৭ নম্বর ধারা যুক্ত করা হয়। এই ধারায় মানহানি, কটূক্তি, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ একগুচ্ছ অভিযোগে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেখালেখি সম্প্রচারের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে।

দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনার মুখে ২০১৮ সালে আইনটি বাতিল হয়। আসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। দেখা যায়, নতুন আইনের কয়েকটি ধারায় ৫৭ ধারার নির্যাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও মতপ্রকাশে আরও কিছু কড়া বাধা যুক্ত হয়েছে। শুরু থেকেই সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনবিদেরা আইনটির অপব্যবহারের আশঙ্কা করছিলেন।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, এ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধগুলো দমনের জন্য আইনটি জরুরি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না যে আইনের অপব্যবহার হচ্ছে না। প্রমাণিত হলে যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার এটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।’

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া অবশ্য মনে করেন, এই আইন মূলত সরকার এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাইবার অপরাধ থেকে নারীকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় দেখা সম্ভব। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্যও আগের আইনটি সংশোধন করে নিলেই চলত। এই আইনের কোনো দরকারই নেই।

অভিযোগের সারমর্ম
গত ১৪ জুন গ্রেপ্তার হয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা। তিন দিন পর গ্রেপ্তার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমান।

সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তার হন এক যুবক এবং হবিগঞ্জে একজন ইমাম। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করে। পাঁচটি মামলাই হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগে।

খবরে আসা ১০৯টি মামলার প্রবণতা বলছে, সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মন্ত্রী, সাংসদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন বলয়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ‘মিথ্যা সংবাদ’ করা, ফেসবুকে লেখা বা সম্প্রচারের অভিযোগে। তারপরই আছে বঙ্গবন্ধু, তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী, প্রধানমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগ।

করোনাভাইরাস ও কোভিডের চিকিৎসা নিয়ে ‘গুজব ছড়ানো’ আর ত্রাণ চুরির ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানো এবং সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। মামলা হয়েছে পুলিশের সমালোচনা করে সংবাদ পরিবেশন এবং ফেসবুকে লেখার অভিযোগে। আছে সরকারবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ। এভাবে তিন-চতুর্থাংশের বেশি অভিযোগই সরকার, সরকারি দলের লোকজন ও সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে বিরূপ কথা বলা নিয়ে (৮৫টি)।

বেশ কিছু মামলা হয়েছে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে। আছে ‘ভুল’ সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ। কারাবন্দী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি চেয়ে অথবা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে কল্পিত মন্ত্রিসভা নিয়ে ফেসবুকে লেখায় মামলা হয়েছে তিনটি। একটি মামলা হয়েছে গাঁজার ছবি পোস্ট করায়।

কোভিড শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে লেখায় পুলিশ গত ১৭ মার্চ গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। কুমিল্লা-৫ আসনের সাংসদ আবদুল মতিন খসরু কোভিডে মারা গেছেন—ফেসবুকে এমন একটি স্ট্যাটাসের নিচে মন্তব্য করেছিলেন ফরহাদ খান ও মাহফুজ বাবু। গত ৯ এপ্রিল ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় তাঁরা গ্রেপ্তার হন।

মামলা করছে পুলিশ ও ক্ষমতার চৌহদ্দিতে থাকা নেতা-কর্মীরা
অনেক আসামি সাংবাদিক

সরকারদলীয় এক সাংসদের কাঁচা ধান কাটার ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করায় ৬ মে গ্রেপ্তার হন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার এক যুবক। কথা না বলে সংবাদে পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করার অভিযোগে ১ মে নরসিংদীতে গ্রেপ্তার হন তিন সাংবাদিক।

পত্রিকায় প্রকাশিত এসব খবরের বিশ্লেষণ বলছে, পেশাজীবী গোষ্ঠী হিসেবে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন সাংবাদিকেরা। গত ৬ মাসে ৩৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মোট ২১টি মামলা হওয়ার খবর কাগজে এসেছে। তাঁদের ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

মোটাদাগে বাদীপক্ষ
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন সম্পর্কে ফেসবুকে বিরূপ পোস্ট দেওয়ায় ৪ মে রাতে গ্রেপ্তার হন স্থানীয় সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার। মামলা করেছিলেন ধরমপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেনুয়ার হোসেন খান।

১০৯টি মামলার মধ্যে ৪৬টির অভিযোগকারী তথা বাদীরা আওয়ামী লীগের সাংসদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক অথবা বর্তমান নেতা। আরও ৪৮টি মামলা করেছে পুলিশ। মোট দাঁড়ায় ৮৬ শতাংশ মামলা।

আইনমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা তথ্যের প্রতিবাদে মামলা করাটা অন্যায় নয়। অধিকাংশ লেখা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, তাই মামলার বাদীও হচ্ছেন তাঁরা। আর পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেছেন, এ ধর‌নের সাইবার অপরা‌ধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো অভি‌যোগকারী না থাক‌লে জনস্বা‌র্থে পুলিশের কোনো সদস্য ‌বাদী হয়ে থাকেন।

ফেসবুকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা করায় একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তিনটি মামলার বাদীরা আবার নিজেরাই সাংবাদিক। দুজন স্থানীয় মৎস্য ও শিক্ষা কর্মকর্তাও বাদী হয়েছেন। তালিকায় আরও আছেন আইনজীবী ও ওষুধ ব্যবসায়ী। আছে এমনকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও।

বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিক্যাল ১৯। সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল ও বাংলাদেশের পরিচালক ফারুখ ফয়সল প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার বা জোর দেখানোর জন্যই এই আইনে মামলা বাড়ছে। সামনে নিপীড়ন ও হেনস্তা আরও বাড়বে।

কিশোরকথা
কিশোর রফিক ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার একটি গ্রামের স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা কৃষিকাজ করেন। বাজেটে মুঠোফোনের কলচার্জ বাড়ানোর প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ১৯ জুন সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালুকা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সেদিনই সেটি মুছে ফেলে দুঃখ প্রকাশ করে রফিক আরেকটি পোস্ট দেয়। কিন্তু মামলা হওয়ায় এবং বিষয়টি সে স্বীকার করায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

সংবাদে আসা ১০৯টি মামলায় অভিযোগের ধরন

• মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশন, ফেসবুকে লেখা বা সম্প্রচার: ৩৩
• বঙ্গবন্ধু, তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী, প্রধানমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি: ২০
• করোনাভাইরাস ও এর চিকিৎসা নিয়ে ‘গুজব ছড়ানো’: ১৯
• ত্রাণ চুরির ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানো ও সংবাদ পরিবেশন: ৫
• সরকারবিরোধী প্রচারণা: ৩
• পুলিশের সমালোচনা করে সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুক লেখা: ৫
• ধর্ম নিয়ে কটূক্তি বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত: ১২
• ‘ভুল’ সংবাদ: ৬
• কারাবন্দি জামায়াত নেতা সাঈদি পক্ষে ফেসবুকে লেখা: ৩
• ফেসবুকে গাঁজার ছবি দেওয়া, পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, ও ‘চাঁদা না পেয়ে সংবাদ পরিবেশন’: ৩

সূত্র: প্রথম আলোর অনুসন্ধান

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, রফিকের বয়স জানলে মামলা করতেন না।

আর আইনমন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে লিখলে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পুলিশ অনেকটা তাকে বাঁচানোর জন্যই গ্রেপ্তার করেছিল। তা ছাড়া তার বয়সী ছেলে একজন মুরব্বিকে নিয়ে এমন লিখতে পারে না। তারপরও তিনি রাষ্ট্রপক্ষকে তার জামিনের ব্যবস্থা করতে বলেছেন।

কিশোর করিমের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার একটি গ্রামে। তার বিরুদ্ধে মামলাটির বাদী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. জসিম উদ্দিন। ১৩ মে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

ইসলামপুর থানায় মামলার এজাহার বলছে, করিমের নামে একটি ফেসবুক আইডির পাতায় মহানবী (সা.) ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করে দেওয়া একটি পোস্ট দেখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান মোড়ল বলেছেন, তাঁর মুঠোফোনটি পাওয়া গেছে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফিরোজ মিয়ার কাছে। তিনি এবং তাঁর সহায়ক বন্ধু সানোয়ার হোসেনও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

চোখের আড়ালে মামলা বাড়ছেই
৭টির বেশি দৈনিক পত্রিকায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে ১০৯টি মামলার খবর এসেছে। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে প্রথম ৫ মাসেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৪০৩টি, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৫৩ জন। গত পুরো বছরে মামলা হয়েছিল ৭৩২টি, গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৬০৭ জন। অর্থাৎ এ বছর মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা গড়ে মাসে ২০টি করে বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮১ ও ৭১।

আলাদা করে দেখলে করোনাকালে (মার্চ থেকে মে) মাসিক গড় মামলা ৮২ ছাড়াবে। অথচ এ সময় সারা দেশে অপরাধের মোট মামলা কমেছে। পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বলছে, বছরের প্রথম তিন মাসে সব ধরনের মামলা সংখ্যা ছিল মাসে গড়ে ১৭ হাজারের বেশি। এপ্রিলে এটা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। ক্রমে বাড়ছে, তবে জুনেও সংখ্যাটা ১৩ হাজার ছোঁয়নি।

করোনাকালে রাজধানীর ৫০টি থানায় সব অপরাধের মোট মামলা ধপ করে কমে যায়। মার্চ পর্যন্ত মাসে গড়ে দুই হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এপ্রিলে সংখ্যাটা সাড়ে তিন শর নিচে নেমে যায়। চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাইয়ের মামলা একেবারেই তলানিতে ঠেকে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা কমেনি। বছরের প্রথম ৬ মাসে এমন মামলা হয়েছে মোট ১৩১টি। ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ একে অন্যকে হেয় করে অবান্তর মন্তব্য করছে। অসহিষ্ণুতাও বেড়েছে। তুচ্ছ কারণে মানহানি, কটূক্তি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা হচ্ছে।

আইনজীবী শাহদীন মালিক অবশ্য মনে করেন, সমালোচনা থেকে সরকারকে বাঁচানোই আইনটির লক্ষ্য। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মতপ্রকাশের কারণে ফৌজদারি আইনে গ্রেপ্তারের বিধান দেশকে সামন্ত যুগে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। সরকার আপাতত হয়তো কিছু লোককে শায়েস্তা করছে, কিন্তু মানুষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নিজের ভালোর জন্যই সরকারের উচিত আইনটি বাতিল করা।