ট্রেনে চড়বে কোরবানির পশু

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শাক–সবজি, আমের পর এবার কোরবানির পশু পরিবহন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। করোনা পরিস্থিতিতে খামারি ও পশু কারবারিদের সহায়তা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার পর রাজধানীর রেলভবনে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

রেলমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির পশু পরিবহনে রেল কোনো সহায়তা করতে পারে কি না, এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁরা সাধারণ মানুষ, পশু ব্যবসায়ী ও খামারিদের সহায়তার জন্য কোরবানির পশু পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নুরুল ইসলাম জানান, শাক–সবজি ও ফলের মতো কোরবানির পশুও লাগেজ ভ্যানে পরিবহন করা হবে। বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে পশু বেশি আসে। তবে কোন কোন স্থান থেকে বেশি পশু আসতে পারে, তা চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরপর খামারি ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুসারে নির্দিষ্ট স্থান থেকে লাগেজ ভ্যানবাহী ট্রেন চালানো হবে।

রেলমন্ত্রী জানান, মিটারগেজের একেকটি লাগেজ ভ্যানে ১৬টি গরু পরিবহন করা সম্ভব। ব্রডগেজে ২০–২১টি গরুর ঠাঁই হবে। এমন একটি মিটারগেজ ট্রেন গাইবান্ধা থেকে চট্টগ্রামে গেলে ৩৩–৩৪ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে। পাবনা থেকে ঢাকা এলে ভাড়া আরও কম লাগবে। সব মিলিয়ে একটি গরু ঢাকা আনলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে খরচ পড়তে পারে। চট্টগ্রামে গেলে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লাগবে।

শুধু গরুই পরিবহন করা হবে কি না, জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, ছাগল ও মহিষ পরিবহন করা যাবে। তবে উট ওঠানো যাবে না।

রেলমন্ত্রী বলেন, ছাগলের জন্য আলাদা লাগেজ ভ্যান হবে। এক ভ্যানে বেশি পরিমাণে ছাগল পরিবহন করা যাবে। ভাড়াও সেভাবে নির্ধারণ করা হবে।

রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিয়াজাহান বলেন, তাঁরা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ঘাট থেকে ২০০৮ সালে সাতটি কোরবানির পশুবাহী ট্রেন পরিচালনা করেছিলেন। এবার করোনাকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল নামে আম পরিবহন করা হচ্ছে। সপ্তাহে প্রায় ২০০ টন আম পরিবহন করা হচ্ছে।

করোনার কারণে দেশে লকডাউন শুরু হলে প্রথমে শাক–সবজি পরিবহন করার জন্য লাগেজ ভ্যান চালু হয়। এরপর আম পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, লাগেজ ভ্যানগুলো স্বাভাবিক সময়ে যাত্রীবাহী মেইল বা লোকাল ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলাচল করে। এসব লাগেজ ভ্যানে নানা পার্সেল পাঠানো হয়। কাঁচামালের মধ্যে কলা ও অন্য ফল সীমিতভাবে পরিবহন করা হয়। কিছু কিছু স্থান থেকে শুঁটকি, মাছ ও মুরগিও পরিবহন করা হয়। একসময় রেলে গরু–ছাগল পরিবহন করা হতো। ট্রাকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার পর পশু পরিবহন করা হয় না। কিন্তু এখন করোনাকালে পুনরায় এ সেবা চালু হতে যাচ্ছে।

ঈদে যাত্রীবাহী ট্রেনের চলাচল বাড়ানো হবে কি না, জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, আপাতত আর ট্রেন বাড়ানো হবে না। কারণ, তাঁরা করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে দরকার না হলে যাতায়াত না করতে বলছেন। সরকারও একই কথা বলছে। এ অবস্থায় ট্রেন বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।

করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর প্রথমেই গত ২৪ মার্চ সারা দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মালবাহী ট্রেন চালু থাকলেও খুব একটা চাহিদা ছিল না। এরপর এপ্রিলে শাক–সবজি পরিবহনে লাগেজ ভ্যান চালু করা হয়।

৩১ মে থেকে দেশে গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করার পর যাত্রীবাহী ট্রেন সীমিত আকারে চালু হয়। ১৯ জোড়া আন্তনগর ট্রেন চালুর পর যাত্রীর অভাবে ২টি ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। এখন ১৭ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানোর লক্ষ্যে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। গত ১ মাসের পরিসংখ্যান বলছে, অর্ধেক আসনেরও ২০–২৫ শতাংশ টিকিট অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জুনের মাঝামাঝি আরও কিছু ট্রেন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েও পিছিয়ে আসে রেলপথ মন্ত্রণালয়।