অবশেষে রিজেন্টের ব্যাপারে মুখ খুলল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

রিজেন্ট হাসাপাতাল। ছবি: সাজিদ হোসেন
রিজেন্ট হাসাপাতাল। ছবি: সাজিদ হোসেন

অবশেষে রিজেন্ট হাসপাতাল সম্পর্কে মুখ খুলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতালের শাখা দুটির (উত্তরা ও মিরপুর) কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশের কথা বলা হয়। এর আগে বিকেলে র‌্যাব উত্তরায় রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দেয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের ওই দুই শাখায় গত মার্চ থেকে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গতকাল সোমবার র‌্যাবের অভিযানে উত্তরা শাখায় (মূল শাখা) বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। এতে দেখা যায়, হাসপাতাল দুটি রোগীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিরাট অঙ্কের টাকা আদায় করছে। পাশাপাশি অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ আরও অনিয়ম প্রমাণিত হয়। এসব অনিয়মের কারণে এবং ‘মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবটোরিস রেজুলেশন অরডিনান্স-১৯৮২’ অনুযায়ী এই হাসপাতালের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলো।

এর আগে আজ দুপুরে রিজেন্ট হাসপাতালের নামে প্রতারণার অভিযোগ এবং সনদ না থাকলেও চুক্তি কেন করা হলো জানতে চেয়ে খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের। উত্তর পাওয়া যায়নি অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক আমিনুল হাসানেরও।

গতকাল সোমবার র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রিজেন্ট হাসপাতালের দুটো শাখায় (উত্তরা ও মিরপুর) অভিযান চালায়। এ সময় হাসপাতালটির ব্যবস্থাপকসহ আটজনকে আটক করে। পরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এদের মধ্যে চারজনের এসব অপরাধ সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আজ র‌্যাবের সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে প্রধান আসামি করে মোট ১৭ জনের নামে মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রধান কার্যালয় সিলগালা করার পর সংস্থাটি জানায়, রোগীদের সরানোর পর দুটি হাসপাতালই সিলগালা করা হবে।

উত্তরায় রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দেওয়া হয়। ছবি: সাজিদ হোসেন
উত্তরায় রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দেওয়া হয়। ছবি: সাজিদ হোসেন

গতকাল অভিযান চলার সময় র‍্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। প্রথমত, তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। এ ধরনের ১৪টি অভিযোগ র‌্যাবের কাছে জমা পড়ে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে (এ সময় সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকর্মীদের বিলের নথি দেখান)। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে—এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়। সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত শ দুয়েক কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৃতীয় অপরাধ হলো, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের তারা কোভিড পরীক্ষা করবে বিনা মূল্যে। কিন্তু তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে।

গতকালের অভিযানের সময়ই সারোয়ার আলম জানিয়েছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। কীভাবে সরকার এমন একটি হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চুক্তিতে গেল, তা খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।

তবে রিজেন্টের মালিক মো. সাহেদ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে গতকাল প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, তাঁর কখনো বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিনি বলেছিলেন, ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দিলে তিনি বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবেন। ভুয়া পরীক্ষার ব্যাপারেও তিনি কিছু জানেন না। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

সপ্তাহ কয়েক আগে জেকেজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও পরীক্ষা না করে প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্নধার আরিফুল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জেকেজির কার্যক্রম দেখতে গেছেন, সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মজেকেজি কী করে নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন পেল, সে সম্পর্কেও অধিদপ্তর মুখ খোলেনি।