করোনাকাল, অখণ্ড অবসরে ব্যবসায়ী হলেন 'ছাদ কৃষক'

ছাদবাগানে গাছের পরিচর্যা করছেন বাদল বিশ্বাস। ছবি: প্রথম আলো
ছাদবাগানে গাছের পরিচর্যা করছেন বাদল বিশ্বাস। ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজারের প্রতিষ্ঠিত মাছ ব্যবসায়ী মো. বাদল বিশ্বাস। চার মাস আগেও ব্যস্ততার কমতি ছিল না। করোনাভাইরাসের শুরু থেকে ব্যবসায় মন্দাভাব শুরু হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বাসা থেকে বের হন না। হাতে অখণ্ড অবসর। তাই নিজেকে মানসিকভাবে চাঙা রাখতে ছাদে গড়ে তোলা শখের বাগানে সময় দিচ্ছেন।

বাদল বিশ্বাস গোয়ালন্দ পৌরসভার আড়তপট্টি এলাকার বাসিন্দা। প্রয়াত বাবার রেখে যাওয়া মাছ ব্যবসা ছোট বেলা থেকেই তিনি দেখভাল করেন। সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। বাগানের শখ ছিল আগে থেকেই। চার বছর আগে নিজ বাড়ির ছাদে বাগান করা শুরু করেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাছের ব্যারেল কেটে দুই ভাগ করে তাতে মাটিসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে তিনি রোপণ করছেন বিভিন্ন ধরনের ফলদ গাছ।

বাদল বিশ্বাস জানালেন, চার বছর আগে একদিন দেখেন, স্ত্রী ঝরনা বেগম দুটি টবে লেবু ও মেহেদিগাছের চারা রোপণ করেছেন। স্ত্রীর এই শখ দেখে তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রথমে বাজার থেকে তিনি আম্রপলিগাছের চারা কিনে আনেন। পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ ফল খাওয়ার ইচ্ছা থেকে ছাদবাগানের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর বারি-৪, ল্যাংড়া, রাঙা সিঁদুর, ব্যানানাসহ বিভিন্ন জাতের আমের চারা কিনে আনেন। এ সময় নিজের আড়তঘর থেকে আরও কয়েকটি ব্যারেল নিয়ে এসে শ্রমিক দিয়ে জৈব সার ও মাটি এনে ব্যারেল ভর্তি করেন।

বাদল বিশ্বাস তাঁর দোতলা ভবনের ছাদের প্রায় ২ হাজার ৯০০ বর্গফুট জায়গার ওপর শুরু করেন বাগান নির্মাণের কাজ। বাগানে রয়েছে বাহারি ধরনের ফলের গাছ। ছয় জাতের আম, পাঁচ জাতের পেয়ারা, বিদেশি সাদা রঙের জামসহ ২৭ ধরনের ফল গাছ রয়েছে। দুই ধরনের মাল্টা, তিন ধরনের লেবু, তিন ধরনের সফেদা, দুই ধরনের বরই, শরিফা, আঙুর, বেদানা, ডালিম, আম, আমড়া, কামরাঙা, করমচা, কমলা, জলপাই, জামরুল—কী গাছ নেই তাঁর বাগানে!

সাদা রঙের জামের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বাদল বিশ্বাস বলেন, ‘ভারতে ঘুরতে গিয়ে এ ধরনের জাম দেখে আগ্রহী হই। পরে লোক মারফত ওই জামের চারাটি এনেছি। এ বছরই প্রথম জাম ধরেছে। খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি।’

বাদল বিশ্বাসের ছাদবাগান। ছবি: প্রথম আলো
বাদল বিশ্বাসের ছাদবাগান। ছবি: প্রথম আলো

বাদল বিশ্বাস বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা–বাণিজ্যের অবস্থা বেশি ভালো নয়। বেশির ভাগ সময় বাসায় বসে সময় কাটাতে হচ্ছে। তাই এখন ছাদবাগানে সময় কাটাচ্ছি। এতে উপকৃত হচ্ছি। মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছি। সেই সঙ্গে ফরমালিন ও কীটনাশকমুক্ত ফল পাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের ফলের চাহিদাও মিটছে।’

স্ত্রী ঝরনা বেগম বলেন, ‘বাড়ির ছাদের জায়গা অহেতুক পড়েই ছিল। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছাদ কৃষি দেখে আগ্রহ তৈরি হয়। একদিন বাড়ির পরিত্যক্ত দুটি টবের একটিতে মেহেদি চারা, আরেকটিতে লেবু চারা রোপণ করি। তা দেখে আমার স্বামী বাজার থেকে বেশ কয়েকটি ব্যারেল এনে আরও কয়েক ধরনের ফলের গাছ রোপণ করেন। এখন বাসার ছাদ ফলের গাছে ভর্তি। দেখতেও ভালো লাগে।’

বাদল বিশ্বাসের ছাদবাগানের প্রশংসা করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার বলেন, ‘তিনি বাগানটি চমৎকারভাবে করেছেন। জমির ওপর চাপ কমাতে ছাদ কৃষি বা ছাদবাগানের বিকল্প নেই। বাদল বিশ্বাসের এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। বড় শহরে ছাদ কৃষি বা ছাদবাগান দেখভালের জন্য আলাদা কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। বাগানের গাছসম্পর্কিত কোনো সহযোগিতা লাগলে কৃষি বিভাগ দেবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, ‘বাদল বিশ্বাসের এমন ছাদবাগানের বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা লাগলে করা হবে।’