ওয়ারীর নমুনায় প্রায় ৫০ শতাংশ পজিটিভ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর ওয়ারীতে লকডাউনের মধ্যে গত শনিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত করোনা পরীক্ষায় নমুনা দিয়েছেন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ২৪ জনের, যা নমুনা সংগ্রহের প্রায় ৫০ ভাগ।

করোনা সংক্রমণের এই চিত্র দেখে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে লকডাউনের আগে এই এলাকায় আরও ৪৭ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লকডাউনের আগে এই পরিমাণ সংক্রমিত বা করোনা পজিটিভের খবর তাঁরা জানতেন না। এখন পরিচিতদের অনেকের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাচ্ছেন তাঁরা। এতে বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ফলে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।

এদিকে লকডাউনের চতুর্থ দিন আজ মঙ্গলবার ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী বুথে আরও ১৮ জন করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গড়ে ৫০ ভাগ করোনা পজিটিভ হতে পারেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সোমবার নমুনা দিয়েছিলেন ১৬ জন, তার মধ্যে ৭ জন করোনা পজিটিভ। এর আগে গত শনিবার ১৬ জনের মধ্যে ৭ জন, পরদিন ১৯ জনের মধ্যে ১০ জন সংক্রমিত হয়েছেন।

করোনা সংক্রমণের এই হার ওয়ারী লকডাউনে যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। আজ নগর ভবনে ওয়ারী লকডাউন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক পর্যালোনায় সভা শেষে এই মন্তব্য করেন তিনি। মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, 'নমুনা সংগ্রহের প্রায় ৫০ ভাগের বেশি মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়ছে। তাই বাকি দিনগুলোতে ওয়ারী লকডাউন আরও কঠোর হবে বলে জানান তিনি।

গত শনিবার ভোর ছয়টা থেকে ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন), লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‌্যাংকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিটে লকডাউন শুরু হয়। করোনা প্রতিরোধে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ওয়ারীতে লকডাউন চলবে। ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হাসানের নেতৃত্বে এই লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আজ কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে ওয়ারী লকডাউন চতুর্থ দিন পার করল। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত ছাড়া কাউকে বের হতে বা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভেতরের রাস্তাঘাট ফাঁকা। ফার্মেসি, সুপার শপ ছাড়া বাকি সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

লকডাউনের পর থেকে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে ওয়্যার স্ট্রিটের বাসায় অবস্থান করছেন কামাল উদ্দিন। আজ দুপুরে বাসার পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করতে বের হন তিনি। আলাপকালে কামাল উদ্দিন বলেন, লকডাউনের আগে ওয়ারীর কে বা কারা সংক্রমিত হচ্ছেন, তা জানতাম না। এখন পরিচিতদের কয়েকজন সংক্রমিত হওয়ার খবর পাচ্ছি। এ নিয়ে পরিবারের সবাই আতঙ্কে আছি।

ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য যান ওয়াহিদুজ্জামান (৫৫)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছেলে নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার তাঁর চাচা মোস্তাফিজুর করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এর মধ্যে তাঁর বাবার জ্বর, গলাব্যথা শুরু হয়েছে। এখন আতঙ্কে বাসায় যে যাঁর মতো করে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন।

ওয়ারীর লকডাউন করা এলাকাটি ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান বলেন, লকডাউন এলাকাগুলোতে লক্ষাধিক মানুষের বাস। তাই এলাকাগুলোতে করোনা সংক্রমণে বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এখন আতঙ্কিত না হয়ে, সচেতনতা বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

লকডাউন এলাকার কন্টোল রুমের দায়িত্বে রয়েছেন ডিএসসিসির অঞ্চল-৫ এর সমাজ কল্যাণ দপ্তরের প্রশিক্ষক নূরুর ইসলাম। তিনি বলেন, যাদের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে, তাদের ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল ও নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের অধিকাংশ বাসায়ই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ওয়ারী লকডাউনে আরও কঠোর হবে
আজ বিকেলে নগরভবনে এক সভা শেষে ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ারী লকডাউনে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়ছে। সিটি করপোরেশন সেটা আমলে নিয়েছে। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে সমন্বয় সভা করা হবে। লকডাউন আরও কঠোরভাবে পালন করা হবে।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বাসিন্দাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে, সেটা জানি। তাদের জীবিকা নির্বাহসহ ব্যবসা বাণিজ্য ও চলাফেরার অনেক অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সঙ্গে লকডাউন পালন করতে হবে।’