চট্টগ্রামের এক ওয়ার্ডে লকডাউনে সাফল্য

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের একটি ওয়ার্ড ‘লকডাউন’ করে ভালো সাফল্য পাওয়ার দাবি করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। সেই ওয়ার্ডে সংক্রমণের হার প্রতি লাখে ১৪৫ থেকে ২৫ জনে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় আজ বুধবার ওই ওয়ার্ড থেকে উঠে যাচ্ছে লকডাউন। কিন্তু বাকি ওয়ার্ডগুলোর ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তবে মুহূর্তে মুহূর্তে লাল জোন হলুদ হচ্ছে। হলুদ হচ্ছে লাল। আজ বুধবার নতুন করে লাল, হলুদ ও সবুজ জোন চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

গত ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে চট্টগ্রাম নগরের ১১টি এলাকাকে রেড বা লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত করে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিজেদের সুবিধার জন্য এটিকে ১০টি ওয়ার্ডে ভাগ করে নেয়। এর মধ্যে লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত নগরের ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন শুরু হয় ১৭ জুন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটির ১০ নম্বর ওয়ার্ড ২১ দিনের জন্য লকডাউন করা হয়। যদিও ওয়ার্ডে লকডাউন হয়েছে ঢিলেঢালাভাবে। সড়কের মাথায় স্থাপিত বাঁশের বেড়ার ফাঁক গলিয়ে অনেকে যাতায়াত করেছিলেন। তাতেও সাফল্য দাবি করছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দাবি, ১৭ জুন ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতি লাখে করোনা রোগী ছিলেন ১৪৫ জন। লকডাউন শুরুর ২০তম দিনে তা ২৫ জনে নেমে এসেছে। ওই ওয়ার্ডে জনসংখ্যা ৬৯ হাজারের কিছু বেশি। ওই হিসাবে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৮ জন করোনা রোগী আছে ওই ওয়ার্ডে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লকডাউন করে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে আমরা ভালো সাফল্য পেয়েছি। সেখানে করোনার বিস্তার তেমন ঘটেনি। বরং অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এটা ধরে রাখা হবে চ্যালেঞ্জ।’

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র কার্যালয় সূত্র জানায়, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে লকডাউন শুরুর আগ মুহূর্তে ১০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সেখান থেকে মারা যান তিনজন। লকডাউন শুরু হলে আরও ২৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে শনাক্ত হয় আরও ১৮ জন। ১৭ জনই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। একজন কেবল ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লকডাউন শুরুর আগ মুহূর্তে যে ১০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যুর পর বাকি ৯৮ জনই সুস্থ হয়ে গেছেন। তাতে সাফল্য দেখছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সার্বিক চিত্র তুলে ধরে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। ১৩ জুন যে ১০টি ওয়ার্ডকে লাল জোন ঘোষণা হয়েছিল, সেখান থেকে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড বাদ পড়ছে। কারণ, ওই ওয়ার্ডে করোনা রোগী কমে আসছে। ফলে সেটি হলুদ জোনের ভেতরে ঢুকে গেছে। তবে হলুদ জোনের আরও কয়েকটি ওয়ার্ড লাল জোনে ঢুকে গেছে।

মেয়র নাছির বলেন, ‘বুধবার বৈঠক করে আমরা লাল, হলুদ ও সবুজ জোন আবার পুনর্নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠাব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৬০ বা আরও বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হলে সেটি লাল জোনের অন্তর্ভুক্ত হবে। ৬০ জনের নিচে হলে হলুদ জোন এবং ৫ জনের নিচে হলে সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে।

গত ২৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের নেতৃত্বে আবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২ নম্বর জালালবাদ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ১৩ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখানবাজার, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম, ১৬ নম্বর চকবাজার, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার, ২১ নম্বর জামালখান, ২২ নম্বর এনায়েতবাজার, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৭ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ও ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডকে লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সিটি মেয়র অবশ্য বলেন, ‘মানুষের জীবন ও জীবিকা—দুটিই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। পুরো ওয়ার্ড লকডাউন করা হলে সবকিছু স্থবির হয়ে যাবে। তবে যে ভবনে করোনা রোগী আছে, সেগুলো লকডাউন করে দিতে পারলে আমরা আরও সাফল্য পাব।’

চট্টগ্রামে গতকাল ভোর ছয়টা পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৭৭ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটিতে ৭ হাজার ২৮৬ এবং বিভিন্ন উপজেলায় ৩ হাজার ১৯১ জন। করোনায় মারা গেছে ১৯৮ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন ১ হাজার ২৬৫ এবং বাড়িতে সুস্থ হন ৪ হাজার ৪৫৩ জন।