পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, সড়ক ডুবে দিনে ৮ ঘণ্টা বন্ধ চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি

পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক তলিয়ে যায়। ফলে জোয়ারের সময় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা করতে পারে না। আর অন্যান্য সময় ঝুঁকি নিয়েই চলে গাড়ি ওঠানামা। নরসিংহপুর ফেরিঘাট, ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুর, ৭ জুলাই। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ।
পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক তলিয়ে যায়। ফলে জোয়ারের সময় ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা করতে পারে না। আর অন্যান্য সময় ঝুঁকি নিয়েই চলে গাড়ি ওঠানামা। নরসিংহপুর ফেরিঘাট, ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুর, ৭ জুলাই। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ।

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এক সপ্তাহ যাবৎ প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক তলিয়ে যায়। এ কারণে চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে দিনে ও রাতে দুই দফায় চার ঘণ্টা করে আট ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চালকেরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) নরসিংহপুর ঘাট সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ সহজে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সঙ্গে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথ ব্যবহার করে। এ নৌপথের ভেদরগঞ্জের নরসিংহপুর ঘাট ও চাঁদপুরের হরিনা ঘাটের মধ্যে পদ্মা ও মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে পাঁচটি কে–টাইপ ফেরি চলাচল করে। নরসিংহপুর ঘাটে ফেরি ওঠানামা করার জন্য দুটি ফেরির পন্টুন রয়েছে। ওই দুটি পন্টুনের সংযোগ সড়ক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এক সপ্তাহ যাবৎ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ও ভোর ৬টা হতে সকাল ১০টা পর্যন্ত জোয়ারের পানিতে সংযোগ সড়ক তলিয়ে থাকে। ওই সময় কোনো যানবাহন ফেরিতে ওঠানামা করতে পারে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টা ফেরি চলাচল না করার কারণে নরসিংহপুর ঘাটে অন্তত চার শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে।

চট্টগ্রাম থেকে মাছ নিয়ে ফরিদপুর শহরে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার। তাঁর ট্রাকটি পারাপার হচ্ছিল কলমিলতা ফেরিতে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় ফেরিটি নরসিংহপুর ঘাটে পৌঁছায়। ততক্ষণে জোয়ারের পানিতে সংযোগ সড়ক তলিয়ে গেছে। ফেরি থেকে ট্রাক নামানোর জন্য তাঁকে রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। আব্দুল জব্বার বলেন, ‘রাতেই মাছের পাইকারি বাজার ধরতে হয়। কিন্তু পানিতে ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে গাড়ি নামাতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে, প্রতিযোগিতার বাজার, সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় দাম কম পাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম-বেনাপোল স্থলবন্দরে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যাতায়াত করেন ট্রাকচালক মাহাবুর রহমান। গত এক সপ্তাহে তাঁর ট্রাকটি দুই দফা ঘাটে আটকা পড়ে। মাহাবুর রহমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ যাবৎ ঘাটের এ সমস্যা, কিন্তু কর্তৃপক্ষ সমাধানে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাদের অবহেলায় আমাদের সময় নষ্ট হচ্ছে।’

নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ইজারাদার ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিতু মিয়া ব্যাপারী বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে ঘাটটির সংযোগ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসিকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তাদের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।’

বিআইডব্লিউটিসির নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ফেরির পন্টুনের র‌্যাম্প উঁচু করা হয়েছে এবং সংযোগ সড়ক উঁচু করার জন্য ইট ফেলা হয়েছে, যা পর্যাপ্ত ছিল না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।