অ্যান্টিবডি কিট নীতিমালায় অস্পষ্টতা, ফাঁকফোকর

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

করোনায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষার বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নতুন নীতিমালায় অস্পষ্টতা রয়েছে। নীতিমালার ফাঁকফোকরে কিট আমদানির পথ সুগম হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে তৈরি গণস্থাস্থ্যের কিট উৎপাদন প্রক্রিয়া পিছিয়ে পড়ছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ৫ জুলাইয়ের ‘ইতিবাচক’ বৈঠকের পরদিনই গণস্বাস্থ্য ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের দুই লাখ কিট তৈরির জন্য ১৩ ধরনের কাঁচামাল (রিএজেন্ট) আমদানির অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর শুধু ৫ হাজার কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

৬ জুলাই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের সই করা চিঠিতে বলা হয়, আমদানি করা উপকরণ শুধু কিট উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করতে হবে। গণস্বাস্থ্য কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কা
ঁচামাল আমদানির বিষয়ে আমরা ওষুধ প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে আসছি সেই ২৫ মে থেকে। মুচলেকা দিয়েছি, বিপণন করব না। কারিগরি কমিটি কিট বাতিল করেনি। উন্নত করতে বলেছে। আমরা সেটাই করেছি। ওষুধ প্রশাসন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমরা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল চেয়ে অনাপত্তিপত্র চাইলাম। তাঁরা পরিমাণ এতটাই কমিয়ে দিয়েছেন, যা আমদানিযোগ্য নয়। সরবরাহকারীরা এত স্বল্প পরিমাণে দিতে রাজি হয় কি না, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। এতে আমাদের কিটের অধিকতর উন্নয়ন প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হবে। তাই গত সোমবার তাঁদের ৬ জুলাইয়ের পত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছি। উত্তর পাইনি।’

আমদানির নানা দিক

অ্যান্টিবডি কিটের নতুন নীতিমালায় বিদেশ থেকে আমদানি করা কিটের ব্যবহার শুরুর আগে স্থানীয় গবেষণাগারে তা পরীক্ষা করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। মার্কিন কেন্দ্রীয় ঔষধ সংস্থা এফডিএর ছাড়পত্রের কাগজ দাখিল বা ডিজাইন/ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ না করেই তা জরুরি ভিত্তিতে আমদানির ছাড়পত্র লাভের সুযোগ আছে। বিশেষ করে নতুন নীতিমালায় আমদানি করা অ্যান্টিবডি কিটের দাম নির্ধারণে কিছু বলা হয়নি।

কিট আমদানির সঙ্গে কোটি কোটি টাকার ব্যবসার প্রশ্ন জড়িত। তাই কিট আমদানির পুরো প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ থাকে, কোনো নিয়মনীতির বরখেলাপ বা অসাধু ব্যবসা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমদানি করা কিট বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব কিট স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা করে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে–নজির আহমেদ এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

অ্যান্টিবডি কিটের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গোড়াতে অ্যান্টিবডি কিটের বিষয়ে রাজি ছিলাম না। কমিটিতে আলোচনা করেই এর বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু এখন এটা দরকারি হয়ে পড়েছে।’ আমদানি করা কিটের যাচাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা কমিটিতে নীতিমালাটি নিয়ে আলোচনা করে মতামত দেব।’

কেউ কেউ বলছেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ করেনি। অথচ করোনার সুযোগ নিয়ে শুল্ক মওকুফ এবং মূল্য নির্দিষ্ট না করেই তারা হয়তো বাজারে ঢুকবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র, বাধ্যতামূলক ডিজাইন/ডকুমেন্ট ডসিয়ের যাচাই না করেই তারা অনুমোদন পেতে পারে। অন্যদিকে একটি দেশি কোম্পানি (গণস্বাস্থ্য), যারা অন্তত ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, তাদের প্রায় ৪ মাস বসিয়ে রাখা হলো।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান এর আগে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, গত মার্চেই অন্তত পাঁচটি স্থানীয় কোম্পানি অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিট আমদানির অনুমতি চেয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করেছিল। তারা তখনই বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করেছিল। এরপর গত ২৫ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ২০ থেকে ২৫টি কোম্পানি অ্যান্টিবডি কিট আমদানির জন্য আবেদন করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. সানিয়া তাহমিনা এই প্রতিবেদককে বলেন, এর আগে দেশে সবে করোনার বিস্তার ঘটেছিল বলেই আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন সবাই এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। তবে তিনি মনে করেন, বিদেশি কিট এনেই ব্যবহার করা ঠিক হবে না। স্থানীয়ভাবে এর পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কিটবিষয়ক কারিগরি কমিটির অন্যতম সদস্য। আগে তিনি গণস্বাস্থ্যের কিটের সাফল্যের বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন। ৫ জুলাই মহাখালীতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গণস্বাস্থ্যের গবেষক দলের সঙ্গে তিনিও বসেছিলেন। জানতে চাইলে এ এস এম আলমগীর গণস্বাস্থ্যের কিটের সাফল্যের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, গণস্বাস্থ্যের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ নির্ধারিত শর্ত পূরণ সম্ভব। আমদানি করা কিটের স্থানীয় পরীক্ষার অপরিহার্যতাও স্বীকার করেন তিনি।

ভারতের উদাহরণ

গত এপ্রিলে ভারত ত্রুটিপূর্ণ বিবেচনায় দুটি চীনা কোম্পানির কিটের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছিল। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্টের শুনানিতে প্রশ্ন উঠেছিল, ২৪৫ রুপিতে কেনা কিটের মূল্য কেন ৬০০ রুপি ধরা হয়েছিল?

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) গত মাসের গোড়ার দিকে গুজরাটের একটি কোম্পানির তৈরি অ্যান্টিবডি কিট অনুমোদন দেয়। ১৪ মে তারা এই বিষয়ে গাইডলাইন করে। এ পর্যন্ত ৪২টি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কিট বৈধতা পেয়েছে, যার মধ্যে ১০টির প্রস্তুতকারী ভারতীয় কোম্পানি।

নীতিমালার বাস্তবায়ন চান তাঁরা

এদিকে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বাধীন গণস্বাস্থ্য গবেষক দলের সদস্যরা গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেছেন, নীতিমালার আলোকেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তাঁদেরকে অস্থায়ী নিবন্ধন দিতে পারে। এই আশাতেই তাঁরা ৬ জুলাই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে অস্থায়ী নিবন্ধন চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন ঘোষিত অ্যান্টিবডি কিটবিষয়ক নীতিমালার দ্বিতীয় দফায় বলা আছে, ‘কিটসমূহ প্রাথমিকভাবে স্বল্প সময়ের জন্য ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন দেওয়া হবে।’

গণস্বাস্থ্যের গবেষকেরা বলছেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) বা আইসিডিডিআরবিতে মার্কিনআম্ব্রেলানীতিমালার আওতায় কিট পরীক্ষা করানোর প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি। তাই এখন আমাদেরকে “স্বল্প সময়ের” জন্য অনাপত্তিপত্র বা অস্থায়ী নিবন্ধন দেওয়া হোক। নতুন নীতিমালার আওতায় করা কিট টেস্ট রিপোর্টে যদি আপত্তি না আসে, তাহলে তাঁরা সময়সীমা বাড়াবেন। অন্যথায় বাড়াবেন না। নিবন্ধন দেবেন বা দেবেন না।’

>২৪ জুন ঘোষিত অ্যান্টিবডি কিটবিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। আমদানি করা কিটের স্থানীয় পরীক্ষা জরুরি।

গণস্বাস্থ্যের কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘নীতিমালা এটা বলেনি যে “প্রাথমিকভাবে স্বল্প সময়ের জন্য” জরুরি অনুমতি দিতে হলেও বিএসএমএমইউর মতো প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট লাগবে। তাই আমরা আইনগত দিক বিবেচনায় নিয়েই ৬ জুলাই ঔষধ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। আর এটা তো বাজারজাতকরণের জন্য নয়, শুধুই বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল আমদানিসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে রাখার জন্য।’

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আবারও গভীর আক্ষেপ করে বলছেন, ‘আমরা যদি প্রত্যাশিত অনুমোদন কখনো পেয়েও যাই, তাহলে সেটা মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনের সময়টায় আর দিতে পারছি কোথায়?’

‘অ্যালাইজা’ তো ছিলই

নতুন নীতিমালা বলেছে, ‘গণস্বাস্থ্যের কিটগুলো এখন অ্যালাইজা পদ্ধতি ব্যবহার করে পরীক্ষা করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণস্বাস্থ্য গবেষক দলের একজন সদস্য বলেন, তাঁরা দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে বন্দী হচ্ছেন। অথচ তাঁরা এ জন্য দায়ী নন। মার্কিন নীতিমালা এমন কিছু বলেনি, যা বিএসএমএমইউর গবেষক দলের জানা ছিল না। তাদের কাছে অ্যালাইজা যন্ত্রও ছিল। এটা দিয়ে তারা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া ব্যক্তিদের নমুনায় আমাদের টেস্ট কিটগুলো পরীক্ষা করলেই ৯০ ভাগের ফল মিলতে পারত। তাদের মাত্র ৭০ ভাগ বলতে হতো না। এখন তো আমরা সেই একই কিটে সংবেদনশীলতা ৯৭.৭ ভাগ পেয়েছি, যা মার্কিন নীতিমালার ন্যূনতম শর্তের চেয়ে ৭ দশমিক ৭ ভাগ উপরে।’

নীতিমালার অস্পষ্টতা কোথায়

অ্যান্টিবডি কিট আমদানি ও উৎপাদন বিষয়ে দেশে গত ২৪ জুনের জারি করা নীতিমালাটিই প্রথম। পাঁচ দফার এই নীতিমালা বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর বিধিবিধানগুলো অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট এবং দ্ব্যর্থক। যেমন বিদেশি কিট আমদানির শর্ত সহজ, দেশি কিটের বাজারজাতকরণের শর্ত বেশি কঠোর।

অ্যান্টিবডি কিট নীতিমালায় বলা হয়েছে, এটি বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত, উভয় কিটের জন্য প্রযোজ্য হবে; এবং উভয় ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ঔষধ প্রশাসন ইউএসএফডিএ প্রণীত আম্ব্রেলা নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে হবে।

নীতিমালায় আমদানিকারক বা উৎপাদনকারীকে শর্ত পূরণ করলেও প্রথমেই চূড়ান্ত অনুমোদনের সুযোগ রাখা হয়নি। নীতিমালায় এই বিষয়ে তিনটি ধাপ রয়েছে। বলা হয়েছে, ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক অনাপত্তি সনদ (এনওসি)/ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন/রেজিস্ট্রেশন প্রদানের আবেদন মূল্যায়নপূর্বক নিষ্পত্তি করা হবে।’ এখন এটা পরিষ্কার নয় যে এই তিনটি ধাপের জন্যই আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে কি না। আবেদন করার কোনো নির্ধারিত ফরমও তৈরি করা হয়নি।

তালিকাটি অসম্পূর্ণ

নিবন্ধন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে নতুন নীতিমালার দ্বিতীয় দফায়, কিন্তু তা সম্পূর্ণ নয়। এমনকি এটাও পরিষ্কার নয়, এসব কাগজপত্র কোনো আবেদনকারীকে সবটাই দিতে হবে কি না। ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যায়ন কমিটির হাতে এ বিষয়ে পরিকল্পিতভাবে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা রাখা হয়েছে। কমিটি চাইলে দেবে, না চাইলে আটকে দেবে।

দ্বিতীয় দফাটি এমনভাবে কাগজপত্রে উল্লেখ করেছে, সেখানেও অস্পষ্টতা কিংবা ভিন্নরূপে ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। এ দফায় বলা হয়েছে, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক আমদানীকৃত কিটের অনুমোদন/এনওসি/ ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন প্রদানের ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মেডিকেল ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন গাইডলাইন মোতাবেক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। যথা: এফএসসি/ইইউএ, সিই মার্কিং সনদ, আইএসও সনদ এবং ভেলিডেশন স্টাডি রিপোর্ট । কিটসমূহ প্রাথমিকভাবে স্বল্প সময়ের জন্য ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন দেওয়া হবে। যদি কোনো রেগুলেটরি অথরিটির অবজারভেশন না আসে, সে ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশনের সময় বৃদ্ধি করা যাবে। প্রয়োজনে নিবন্ধন প্রদান করা হবে।’

ওই নীতিতে ‘যথা:’ শব্দ দিয়ে নির্দিষ্টভাবে চার ধরনের কাগজপত্রের উল্লেখ আছে। বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, এগুলো প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকাটা অপরিহার্য। এফএসসি মানে ‘ফ্রি সেলস সার্টিফিকেট’, ইইউএ মানে ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন। এফএসসি আর ইইউ দুটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন তো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিষয়।

সিই মার্কিং সনদ মানে ইউরোপীয় কাউন্সিল চিহ্নিত সনদ। আইএসও মানে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন। কিন্তু যদি ইউএসএফডিএর সমর্থিত এফএসসি থাকে, তাহলে তো একই সঙ্গে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সনদ থাকার দরকার নেই।

একই বিষয়ে ভারতীয় নীতিমালার সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য লক্ষণীয়। ভারতীয় নীতিমালা বলেছে, ইউএসএফডিএর অনুমোদন থাকলে আমদানির ছাড়পত্র পেতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো সরাসরি আবেদন করতে পারবে। কিন্তু সিই মার্কিং থাকলে আইপিজিএমআরের কাছ থেকে ভেলিডেশন আগে পেতে হবে। বাংলাদেশ দুটোর মধ্যে কোনো ফারাক রাখেনি।