এবার ২৫০০ কোটি টাকা বেশি খরচ করতে চায় ডিএসসিসি

নতুন অর্থবছরে প্রায় ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতিষ্ঠার পর এটাই সর্বোচ্চ বাজেট। গত বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। 

আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে। ডিএসসিসির দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংস্থাটি ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল। পরে সংশোধিত বাজেট দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার। ওই বছর সংশোধিত বাজেট ছিল প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা না হলেও সংস্থাটির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মুনান হাওলাদার বাজেটের আকার বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি করপোরেশনের দ্বিতীয় সভায় কাউন্সিলররা সম্মতি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার নগর ভবনে বোর্ড সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
করপোরেশন সূত্র বলছে, বোর্ড সভায় কাউন্সিলরদের সামনে উপস্থাপিত এই বাজেট কিছুটা কমবেশি হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট উপস্থাপন করা হবে।
নতুন করের আওতায় ১৯ খাত

নতুন অর্থবছরে অন্তত ১৯টি খাতকে করের আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রিকশা লাইসেন্স ফি বাবদ বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরে এই খাতে কোনো বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়নি। অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আয়ের হিসাবে খাতটি রয়েছে।
নতুন করের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে জবাইখানা ইজারা, ইমারত নির্মাণ এবং পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদনের ওপর কর, নগরীতে ভোগ, ব্যবহার বা বিক্রয়ের জন্য পণ্য আমদানির ওপর পর, নগর হতে পণ্য রপ্তানির ওপর কর, টোল জাতীয় কর, পেশা বা বৃত্তির ওপর কর, বিবাহ-তালাক গ্রহণ ও জিয়াফতের ওপর কর, পশুর ওপর কর, জনসেবামূলক কার্য সম্পাদনের জন্য রেইট, সরকার কর্তৃক আরোপিত করের ওপর উপকর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ট্রেনিং সেন্টার প্রবৃত্তির ওপর কর, মেলা, কৃষি প্রদর্শনী, শিল্প প্রদর্শনী, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য জনসমাবেশের ওপর ফি, বাজারের ওপর ফি (ইজারা), টিউটোরিয়াল স্কুল, কোচিং সেন্টার প্রভৃতি নিবন্ধন ফি, প্রাইভেট হাসপাতাল, প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রভৃতির নিবন্ধন ফি, করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত হোটেলে অবস্থানকারীর ওপর নগদ কর, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন ও বার্ষিক ফি, ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানে রাস্তা ব্যবহারের ফি।
এ ছাড়া করপোরেশনের আয়ের অন্যতম গৃহকর খাতে এবারও ৩৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই খাতে গত অর্থবছরের একই পরিমাণ টাকার প্রস্তাব রাখা হয়। তবে আদায় হয়েছিল ১৮২ কোটি টাকা। অবশ্য করোনা মহামারির কারণে এবার গৃহকর আদায় কাঙ্ক্ষিত হয়নি বলে জানা গেছে।

মশকনিধনে বরাদ্দ কমবে
গেল অর্থবছরে মশকনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে রাখা হয় ২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। নতুন অর্থবছরে প্রায় ৮ কোটি টাকা কমিয়ে ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে মশার ওষুধ কেনার পেছনে খরচ হতে পারে ৩০ কোটি টাকা। জলাশয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ব্যবস্থাপনায় ১ কোটি এবং ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা।

মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিল কমবে
গেল অর্থবছরের মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮ কোটি টাকা। কিন্তু এই খাতে সাবেক মেয়র খরচ করেছেন ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। নতুন অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা।

বেশি টাকা আসবে সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে
বড় আকৃতির এই বাজেটের বেশির ভাগ টাকাই আসবে সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাত থেকে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আসবে।
নিয়ম অনুযায়ী জুন মাসের মধ্যেই বাজেট ঘোষণা করতে হয়। এ প্রসঙ্গে করপোরেশনের বোর্ড সভায় ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে জুন মাসে বাজেট ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। আগামী বছর থেকে জুন মাসের মধ্যেই বাজেট ঘোষণা করা হবে।