আপত্তির মুখে গভর্নরের মেয়াদ বৃদ্ধির বিল পাস

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

বিরোধীদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির বিল সংসদে পাস হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা যাবে। 

বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাংসদদের সংসদে আপত্তি ছিল, মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরকে আরও দুই বছর এই পদে রেখে দেওয়ার জন্যই বিল আনা হয়েছে। অথচ এই গভর্নরের কোনো অর্জন নেই। তিনি চুরি হয়ে যাওয়া রিজার্ভ ফিরিয়ে আনতে পারেননি। খেলাপি ঋণও আদায় করতে পারেননি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে 'বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২০' পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই–বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন।
অর্থমন্ত্রীর পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী গত বুধবার 'বাংলাদেশ ব্যাংক (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২০' সংসদে উত্থাপন করেন। সাধারণত সংসদে বিল উত্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠান। তবে এই বিলের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। অর্থাৎ বলা চলে তড়িঘড়ি করেই পরদিন বিলটি পাস হয়েছে।

বিলটি প্রত্যাহারের দাবি করে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা, কর্মদক্ষতা, অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির কথা বলে বিলটি আনা হয়েছে। আসলে একজন বিশেষ ব্যক্তির জন্য ৬৭ বছর করা হয়েছে। তাহলে কি এত দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ্য লোক ছিল না? শুধু যে ব্যক্তিটির জন্য করা হয়েছে, তিনিই একমাত্র যোগ্য? তিনি বলেন, 'কিছুক্ষণ পরই হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, বলে ঘোষণা দেওয়া হবে। এটা আমরা জানি। কিন্তু আমরা আমাদের কথা বলে যাব।'

জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক (চুন্নু) বলেন, একজন ব্যক্তির মেয়াদ বাড়াতে এই আইন হলে সমর্থন করা যায় না। বর্তমান গভর্নর কোনো অর্থনীতিবিদ নন। এরপর কি আর কাউকে গর্ভনর করা হবে না? প্রশাসনের অন্যরাও যদি বয়স বাড়ানোর দাবি তোলেন?
মুজিবুল হক বলেন, ফজলে কবিরের আগের গর্ভনর আতিউর রহমানও যোগ্য লোক ছিলেন। কিন্তু রিজার্ভের টাকা তাঁর আমলে চুরি হয়েছে। এখনো সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে পারেননি বর্তমান গভর্নর। এমনকি বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন, এমন তথ্যও জানা নেই।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, গভর্নরকে ৬৫ বছরের স্থলে ৬৭ বছর করাই উদ্দেশ্য। রিজার্ভ চুরির টাকা উনি (গভর্নর) কর্মদক্ষতা দিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারেননি। খেলাপি ঋণ ফিরিয়ে আনতে পারেননি। ঋণ নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করে দেওয়ার প্রবণতাও বন্ধ করতে পারেননি।

জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ঋণ খেলাপি বেড়েই যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সংস্কার হয়নি। সরকারি ব্যাংক কোনো নিয়মে চলে না। শুধু ব্যক্তির বয়স বাড়ালে কাজ হবে না।

সংরক্ষিত নারী সাংসদ রওশন আরা মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগের কী কী যোগ্যতা লাগে, তা কোথাও নেই। শুধু বলা আছে, সরকার নিয়োগ দেবে। এই বিষয়ে আইন–নীতিমালা দরকার।

জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকার কোনো বক্তির জন্য নয়, গভর্নর পদের জন্য আইন করছে। সামনে কেউ যদি মনে করেন ৭০ করবেন, তা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, সাংসদেরা অনেক যুক্তিসংগত কথা বলছেন। সবচেয়ে বড় যুক্তি বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার জায়গা থেকে এই আইন করা হচ্ছে।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করলে পরদিনই ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য গভর্নর নিয়োগ দেয় সরকার। তখন তিনি বিদেশে ছিলেন এবং ফিরে এসে দেশের ১১তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০ মার্চ। সে হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছরের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। এতে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর।