রিজেন্ট-জেকেজির প্রতারণা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কি করল: জি এম কাদের

জি এম কাদের। ফাইল ছবি
জি এম কাদের। ফাইল ছবি

করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে জি এম কাদের বলেন, ‘জেকেজি-রিজেন্ট—করোনার পরীক্ষা করার এবং কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করার অনুমোদন পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে। তারা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান যাদের করোনা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই, চিকিৎসা সুবিধা নেই তারা কীভাবে পরীক্ষা করার অনুমোদন লাভ করল? এরা দায়িত্ব কীভাবে ও কতটুকু পালন করছে বা করছে না, সে বিষয় দেখভালের দায়িত্ব ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তারা কী করল?

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিছু লোককে ধরা হয়েছে, এখন তাদের হয়তো শাস্তি হবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশের মানুষ যখন বিদেশে যাচ্ছে, সেখানে তাদের পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত করা হচ্ছে। দেশের পরীক্ষাকে বিভিন্ন দেশ আর গ্রহণ করছে না। তারা এটাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে না। বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিমান অবতরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ইতালি থেকে ১২৫ জন ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সংসদের এই অধিবেশনে স্বাস্থ্য খাতের সমালোচনার বিষয়টি উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, জরুরি ভিত্তিতে শুরু থেকেই যদি স্বাস্থ্য বিভাগ সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার আলাদা ব্যবস্থা সৃষ্টি, অক্সিজেন সুবিধাদি কার্যকর ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিত, হাসপাতালে আইসিইউ, লাইফ সাপোর্ট ইউনিট স্থাপনের ব্যবস্থা নিত, তাহলে রোগীর মৃত্যুর হার অনেক কম হতো। স্বাস্থ্য বিভাগ কিছুই করেনি—এটা বলা হয়তো ঠিক হবে না। তবে বলা যায়, যে সময় স্বাস্থ্য বিভাগের সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রয়োজন ছিল, তারা সে সময় নিষ্ক্রিয় ছিল। যখন কাজ শুরু করেছে তখন গতি ছিল মন্থর। আগাগোড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনা সুস্পষ্ট ছিল।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন খুব ব্যয়বহুল বা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর যতটুকু সম্ভব থাকলেই মৃত্যুর হার অনেকাংশেই কমে আসবে। সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় লকডাউন কার্যকর সম্ভব হয় না। সে কারণেই এ পদ্ধতিতে যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব না, সেটা আজ পরীক্ষিত সত্য। সে অবস্থায় রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশনে রাখা যদি সম্ভব হয়, তবে সেটা সংক্রমণ রোধের সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি।’

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে বগুড়া ও যশোর উপনির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও নির্বাচন কমিশনের বিষয়। যদিও সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার নেই। তবুও আপনারা হয়তো এ বিষয়ে আমাদের কোনো সহায়তা করতে পারেন। আমি নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছি এই বিষয়ে। যদি এটাকে পরিবর্তন করা সম্ভব হয়, ওনারা বিবেচনা করবেন।’

এর আগে জাতীয় পার্টির সাংসদ বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা ১৪ জুলাই বগুড়া ও যশোরের উপনির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সহায়তা চান। তিনি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই নির্বাচনে ‘তারা’ অংশ নেবে না। আমি তারা বলতে কাদের বুঝিয়েছি, মাননীয় স্পিকার আপনি নিশ্চয় জানেন। সুতরাং, আমাদের আবেগের কথা চিন্তা করে নির্বাচনটা পিছিয়ে দেওয়া হলে ভালো হয়।’