দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও অভিবাসীদের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা দেশে বাংলাদেশের অভিবাসীদের জীবিকাকে সংকটে ফেলেছে। কাজেই দেশে ও বিদেশে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার স্বার্থে বাংলাদেশকে দ্রুত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে বৃহস্পতিবার এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এ মন্তব্য করেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনার আয়োজন করে।

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের ওপর তা কতটা প্রভাব ফেলবে, সে চিত্রটা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে দেশের দুই কোটি জনগোষ্ঠীর ওপর তা প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর যে প্রণোদনা দেওয়া হবে, তার মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে হতদরিদ্র আর ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য। এর ফলে ৪০ শতাংশ বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

আহসান মনসুর বলেন, ‘বলা হচ্ছে দারিদ্র্য কমানো সম্ভব যখন অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। তবে আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সরকারের মতো এত আশাবাদী হয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। হতদরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের জন্য যে সহায়তার পরিকল্পনা ছিল, তা দুর্নীতির কারণে থেমে গেছে। কারণ, ভুল লোকজনের কারণে এটি হয়নি। তাই দারিদ্র্য আর আয় বৈষম্য কমানোর স্বার্থে বিশেষায়িত স্বল্প মেয়াদি কর্মসূচি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়।’

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ফেলো শহীদুল হক বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জুনের এক প্রতিবেদনে ২০২০ সালে ৩১টি ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ঝুঁকিগুলোর মাঝে পঞ্চম স্থানে রয়েছে মানুষ ও পণ্যের আন্তঃ সীমান্ত চলাচলে বিধিনিষেধ। কাজেই করোনাভাইরাস–পরবর্তী বিশ্বে অভিবাসনের প্রেক্ষাপটে দেখলে বলা যায়, চার জায়গায় পরিবর্তন আসবে। প্রথমত মন্দার মধ্য দিয়ে অর্থনীতির গতিপথ বদলে যাবে, উন্নয়নের ধারণায় পরিবর্তন আসবে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়বে, ঝুঁকি বাড়বে পরিবেশের।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, কাজ কমে যাওয়ায় দারিদ্র্য বাড়ছে। আমাদের কর্মীদের প্রচুর পরিমাণে কাজ করেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। এর কারণে এদের আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কাজেই দারিদ্র্য যে বাড়ছে, সেটা কমানোর জন্য খাবারের পাশাপাশি আয় আর চিকিৎসা সহায়তায় নজর দিতে হবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের (সিপিএস) সদস্য হেলাল মহিউদ্দীন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে আলোচনা করেন।

সিপিএসের সমন্বয়কারী জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাপনী বক্তৃতা করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম। আলোচনায় আরও অংশ নেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এদেশীয় পরিচালক গিওর্গি গিগারি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (বহুপক্ষীয় অর্থনৈতিক বিষয়াবলী) নজরুল ইসলাম এবং এসআইপিজির পরিচালক শেখ তৌফিক এম হক পরিচালক।