করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তায় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে চিন্তিত চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। ঈদে এই ভাইরাসের আবার বিস্তার ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য চট্টগ্রামে কোরবানির হাট বাড়ানো এবং হাটের সময় সংক্ষিপ্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে জায়গা না পাওয়ায় সিটি করপোরেশন পশুর হাট বাড়াতে পারছে না।

চিকিৎসকেরা জানান, গত রমজানের সময় করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। রোগী শনাক্তের হার ছিল বেশি। অনেকে মারাও যান।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটে অনেক মানুষের সমাগম হবে। তখন আরও ব্যাপকহারে করোনার বিস্তার ঘটতে পারে। মানুষ সমাগম বা জটলা কমানো নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে।’

কোরবানির পশুর হাট বাড়ানো এবং সময় সংক্ষিপ্ত করার পরামর্শ দিয়ে সিভিল সার্জন প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে পশু কেনাবেচা ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করতে পারলে মানুষ নিরাপদ থাকবে।

চলতি বছর বিবিরহাট ও সাগরিকা ছাড়াও আরও চারটি অস্থায়ী হাট বসানোর উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে অস্থায়ী তিনটি হাটের ইজারাদার পাওয়া গেছে। বাকলিয়া অস্থায়ী হাটের জন্য কেউ দরপত্র জমা দেননি। আবার সেটির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। অথচ গত বছর অস্থায়ী হাট ছিল ছয়টি। এবার আরও দুটি হাট কমে যাচ্ছে। সড়কে যানজট এড়ানোর জন্য পুলিশের পরামর্শে হাট কমাচ্ছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এবার কোরবানির পশুর হাটের প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা পথ তৈরি করে দেবে বলে জানা গেছে। প্রবেশপথে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হবে। সকাল ও বিকেলে দুটি আলাদা সময়ে পশুর হাট বসবে। এক এলাকার লোকজনকে অন্য এলাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হবে। সকালে এক এলাকার লোকজন পছন্দের পশু কিনে নেবেন। বিকেলে তাঁদের পশুহাটে যেতে নিরুৎসাহিত করা হবে, যাতে ভিড় না হয়।

>

পশুর হাট বাড়ানোর প্রস্তাব চিকিৎসকদের
জায়গার অভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না
বরং গত বছরের তুলনায় আরও দুটি হাট কমেছে

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। দুটি স্থায়ী ও চারটি অস্থায়ী হাটে পশু বেচাকেনা করা যাবে। এবারের পশুর হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা পথ করা হচ্ছে। শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধির ওপর আমরা গুরুত্ব দেব। তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব অনলাইনে কেনাবেচার ওপর।’

মেয়র নাছির আরও বলেন, ‘বয়স্ক ও শিশুদের কোরবানির পশুর হাটে যেতে নিরুৎসাহিত করব। একই পরিবারের একজনের বেশি কোরবানির হাটে যেন না যায়, সেই অনুরোধ নগরবাসীর কাছে করব।’

চট্টগ্রাম নগরে জনসংখ্যা ৬৫ থেকে ৭০ লাখ। ঈদের সময়ে একটি বড় অংশ গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। এবার করোনার থাবায় অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আবার বেসরকারি চাকরিজীবী অনেকের বেতন-ভাতা কমে গেছে। ফলে এবার পশুর বাজারে গত বছরের তুলনায় ভিড় কম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৫৯ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে চট্টগ্রামে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হলো ১১ হাজার ৩১ জন। ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনসহ মোট ২০৯ জনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রামে গড় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ১ হাজার ২৯৭ জন। আর বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন ৪ হাজার ৭৬০ জন। চট্টগ্রামে করোনা রোগী সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৫৫ শতাংশ।