পাপুলের কাছে ঘুষ নেওয়া কুয়েতি জেনারেলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

কাজী শহীদ ইসলাম ওরফে পাপুল
কাজী শহীদ ইসলাম ওরফে পাপুল

বাংলাদেশের সাংসদ মোহাম্মদ শহিদ ইসলামকে (পাপুল) মদদের অভিযোগে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ আল সাবাহর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। শহিদ ইসলামের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে রেসিডেন্ট পারমিট বিক্রির অভিযোগে এ তদন্ত হচ্ছে। আজ শুক্রবার কুয়েতের তদন্ত সূত্রের বরাত দিয়ে আরবি দৈনিক আল কাবাস এ খবর জানিয়েছে।

কুয়েতের কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের পর এবার দেশটির এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে ব্যবস্থা নিয়েছে।

কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সিআইডির কর্মকর্তারা মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহর সঙ্গে শহিদ ইসলামের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপর বিষয়টি পাবলিক প্রসিকিউশনকে জানানো হয়। পরে জুনের ৩০ তারিখ কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল সালেহ মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন।

আল কাবাসের শুক্রবারের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে আটকের নির্দেশ আসতে যাচ্ছে। জ্যেষ্ঠ এই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে কুয়েতের গণমাধ্যম। কারণ, কুয়েতের শাসকদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই মেজর জেনারেলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ভিসা–বাণিজ্য, মানব পাচার ও ঘুষ লেনদেন নিয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছে, তাতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে দেশটির সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

এদিকে মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলামকে আটকের পর তাঁর প্রতিষ্ঠান মারাফিয়া কুয়েতিয়ার দেখাশুনা করছে কুয়েতি অংশীদারের পরিবার। তবে প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন কেউ। কারণ, যাঁদের কাজ আছে, এ মুহূর্তে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন। যাঁদের কাজ নেই, তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। তা ছাড়া এর আগে প্রতিষ্ঠানটির যেসব কাজের চুক্তি নবায়ন হয়েছিল, সেগুলো বাতিলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে নবায়ন হওয়া চারটি কাজের একটি বাতিল হয়ে গেছে। মারাফিয়া কুয়েতিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে শহিদ ইসলাম অভিযুক্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক কাজগুলো বাতিলের প্রসঙ্গটি আলোচনায় রয়েছে।

গত কয়েক দিনে শহিদ ইসলামের প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন এমন কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে এই আভাস পাওয়া গেছে। মারাফিয়া কুয়েতিয়ার বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবস্থাপক ও সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করেন এমন পাঁচজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের সবার অভিযোগ, সাধারণ কর্মীদের যে বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজে নেওয়া হতো, তাঁদের কখনোই তা দেওয়া হতো না। উল্টো প্রতিষ্ঠানের অনেকেই কর্মীদের বেতনের টাকা কেটে নিতেন, বাড়তি সময় কাজ করাতেন। এ বিষয়গুলো জানার পরও কোনো ব্যবস্থাই নিতেন না শহিদ ইসলাম। এর জেরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়েও কর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন।