ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট নয়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট স্থাপন না করার সুপারিশ করেছে করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করতে বলেছে তারা। আর অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালন করে পশুর হাট বসানো পক্ষে মত দিয়েছে কমিটি। তবে শহরের ভেতরে হাট স্থাপন করা করা যাবে না।

অনলাইনে এক সভায় কমিটি মোট আটটি সুপারিশ করেছে বলে আজ শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা এবং সদস্যসচিব মীরজাদী সেব্রিনার সইয়ে গণমাধ্যমে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

কোরবানির হাটের বিষয়ে কমিটি আরও বলেছে, পশুর হাট খোলা ময়দানে হতে হবে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। পঞ্চাশোর্ধ্ব ও অসুস্থ ব্যক্তিদের পশুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকা, পশুর হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক রাস্তা রাখা, হাটে আসা সব ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করা, কোরবানির পশু জবাই বাড়িতে না করে শহরের বাইরে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে করা এবং অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ির বাইরে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হলে তাতে উৎসাহিত করা।

এ ছাড়া কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে আসন্ন ঈদের ছুটিতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

কমিটির অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা ও মানোন্নয়নের জন্য পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা । অটো-এক্সট্র্যাকশন মেশিনের সহযোগিতায় পরীক্ষাগারে পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে দক্ষ জনশক্তিকে পরীক্ষাগারে নিয়োগ দিতে হবে। পরে কোনো স্থানে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে সেসব স্থান ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। নমুনা দেওয়া থেকে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত সময় কমাতে বলেছে কমিটি। কারণ, পরীক্ষার তথ্য দেরিতে পৌঁছালে আইসোলেশন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর হয় না।

অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষার অনুমতির জন্য ওষুধ প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়ে কমিটি বলেছে এতে অতি সত্বর কোভিড-১৯ পরীক্ষার সুযোগ প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সেরোসার্ভিলেন্স কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করার পরামর্শ দিলেও বেসরকারিভাবে এই কার্যক্রম না করার জন্য মতামত দিয়েছে কমিটি।

এ ছাড়া আরটি পিসিআরে পরীক্ষার কিট এক প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহের পরিবর্তে বহু প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বলেছে কমিটি, যাতে কিটের সংকট সৃষ্টি না হয়। একই ধরনের পরীক্ষার কিটের পরিবর্তে অধিকতর উন্নত এবং সুলভ মূল্যের কিট জোগাড়ের ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে কমিটি।

বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও আক্রান্ত নন—এমন প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিটের ব্যবস্থা করা, প্রবীণদের জন্য সহজভাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা, সম্ভব হলে বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা, সঠিক মাননিয়ন্ত্রণ ও সঠিক মূল্যে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা কেনা নিশ্চিত করা, রোগীদের হয়রানি কমাতে হাসপাতালের খালি শয্যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন দেওয়া ও হাসপাতালের সামনে প্রদর্শন করা এবং আন্তহাসপাতাল যোগাযোগব্যবস্থার মাধ্যমে এক হাসপাতাল অপর হাসপাতালের খালি শয্যার তথ্য যেন পায়, তার ব্যবস্থা করতে বলেছে কমিটি।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯–এর ভ্যাকসিন প্রস্তুতের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে কমিটি। তবে কমিটি বলেছে, ভ্যাকসিন প্রস্তুত অথবা আবিষ্কার অবশ্যই সরকার, বিএমআরসি ও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে এবং ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে করতে হবে।