বাবাকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন ছেলে

মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে শিকল দিয়ে ফুল মিয়াকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পিপুলনারী গ্রাম, বাকলজোড়া ইউনিয়ন, নেত্রকোনা। ছবি: সংগৃহীত
মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে শিকল দিয়ে ফুল মিয়াকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পিপুলনারী গ্রাম, বাকলজোড়া ইউনিয়ন, নেত্রকোনা। ছবি: সংগৃহীত

মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে বাবাকে প্রায় তিন বছর ধরে ঘরের একটি কক্ষে শিকলে বেঁধে রাখার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের পিপুলনারী গ্রামের।

শিকলে বাঁধা ওই বাবার নাম ফুল মিয়া (৬০)। আর অভিযুক্ত তাঁর ছেলে হলেন আবু হানিফ (৪০)। তিনি গ্রামের একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। অসহায় ফুল মিয়া এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি জানান, ২০০৩ সালে পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে দা দিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন ফুল মিয়া। এ ঘটনায় নিহত স্ত্রীর ভাই মামলা করেন। মামলায় আদালতের রায়ে ফুল মিয়া ১২ বছর ৫ মাস ১৭ দিন জেল খেটে বের হন। প্রায় তিন বছর আগে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে এলাকায় চলাফেরা করেন তিনি। একপর্যায়ে তাঁর ছেলে আবু হানিফের সঙ্গে বিবাদ লাগে। এরপর থেকে ঘরের একটি কক্ষে পায়ে শিকল বেঁধে বাবাকে আটকে রাখেন ছেলে। বর্তমানে ওই কক্ষে খাবার, পয়োনিষ্কাশন, গোসলসহ সবকিছুই করতে হচ্ছে তাঁকে।

এ খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ওই বাড়িতে গেলে নিজের বন্দিদশা থেকে মুক্তির দাবি জানান ফুল মিয়া। নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ দাবি করে ফুল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর সৎ ভাই সুরুজ মিয়া ও রফিকুলের পরামর্শে ছোট ছেলে আবু হানিফ হঠাৎ করে মানসিক রোগী হিসেবে আখ্যা দিয়ে ঘরে বন্দী করে দুই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আবদুল কাদির কৃষিকাজ করেন। আর মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে।

শুক্রবার বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবার মাথায় সমস্যা আছে। জেল থেকে বের হয়ে দা হাতে নিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিল। এ ছাড়া মানুষের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে। তাই পরিবারের সবার পরামর্শে প্রায় আড়াই–তিন বছর ধরে এক ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এতে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সবকিছুর ব্যবস্থা রয়েছে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আবু হানিফ বলেন, ‘মাথায় সমস্যার জন্য কয়েকবার কবিরাজ দেখিয়েছি। একবার ময়মনসিংহে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। তবে এর প্রেসক্রিপশন বা কাগজপত্র নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা যদি ভালোভাবে চলে, তবে শিকল খুলে দেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে বড় ছেলে আবদুল কাদিরের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। আর ফুল মিয়ার পায়ে শিকল দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে সুরুজ আলী ও রফিকুল ইসলাম জানান, ফুল মিয়ার মাথায় সমস্যা আছে। নিজের বউকে মেরে ফেলছেন তিনি। জেল খেটে বের হওয়ার পর তাঁর ছেলে ও তাঁদের মারতে তিনি উদ্যত হন। তাঁর সন্তানসহ আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে তাঁকে এভাবে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাকলজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি সম্প্রতি জেনেছি। ফুল মিয়া মূলত পাগল না। তাঁকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে, এটা অমানবিক ঘটনা। আমি তাঁর ছেলেকে শিকল খুলে দিতে অনুরোধ করেছিলাম। প্রশাসনের সহায়তায় তাঁকে মুক্ত করা হবে।’

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম বলেন, ‘শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বন্দী বৃদ্ধকে অচিরেই উদ্ধার করা হবে।’