হানিফের বক্তব্য নাকচ করল কানাডা সিবিএসএ

মাহবুব উল আলম হানিফ। ফাইল ছবি
মাহবুব উল আলম হানিফ। ফাইল ছবি

বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কানাডায় আসা নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা কি না, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মাহবুব উল আলম হানিফ ঢাকার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অংশ নিয়ে বলেছেন, ‘কানাডা সরকারের ইমিডিয়েট ফ্যামিলি মেম্বার’দের জন্য দেওয়া ছাড়ের আওতায় ‘মাইনর’-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ ও কূটনীতিক পাসপোর্টধারী হিসেবে তিনি কানাডায় আসার অনুমোদন পেয়েছেন। তবে কানাডার সরকারি সংস্থা এই দাবিকে নাকচ করে বলেছে, এই সুবিধা কেবল কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্যই প্রযোজ্য। বিদেশের কোনো সাংসদকেই কানাডায় আসার জন্য ঢালাও ছাড় বা অনুমতি দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৬ মার্চ কানাডা সরকার যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব বিদেশি নাগরিকের জন্য কানাডায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে ৮ জুন কেবল কানাডার নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যদের (ইমিডিয়েট ফ্যামিলি মেম্বার) এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দেওয়া হয়। সরকারের ঘোষণায় স্বামী বা স্ত্রী, বাবা বা মা, পোষ্য সন্তানদের পরিবারের নিকটতম সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর ১৯ জুন কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে মাহবুব উল আলম হানিফ কানাডায় আসেন। গত ২৬ জুন এ নিয়ে প্রথম আলোয় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই ঢাকার বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

বিদেশি নাগরিকদের কানাডায় ঢুকতে দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়ে দেখভাল করার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ)। তাঁর বক্তব্য নিয়ে মতামতের জন্য ২৯ জুন বা সিবিএসএর সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়। পরে ৩ জুলাই সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ কীভাবে কানাডায় এসেছেন, জানতে চেয়ে আবার ই-মেইল পাঠানো হয়। ৮ জুলাই সিবিএসএ সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যক্তির তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র রেবেকা পার্ডি উল্লেখ করেন, বিদেশের কোনো সাংসদকেই কানাডায় আসার জন্য ঢালাও ছাড় বা অনুমতি দেওয়া হয়নি। কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা বা নাগরিক নন, এমন কোনো অসুস্থ বিদেশি বা মাইনরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি কাউকে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া যায় কি না, জানতে চাওয়া হলে তিনি ফিরতি ই-মেইলে জানান, বিদেশি শিক্ষার্থী বা কাজের ভিসা নিয়ে থাকা বিদেশিদের ক্ষেত্রে এই ছাড় প্রযোজ্য নয়। ই-মেইলে এই বক্তব্যটুকু হলুদ রং দিয়ে চিহ্নিত করে দেন তিনি।

>

গত ১৯ জুন মাহবুব উল আলম হানিফ কানাডা যান। কোন পরিচয়ে তিনি কানাডা গেলেন, এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য গত বুধবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) টরন্টোয় বসবাসরত মাহবুব উল আলম হানিফের সঙ্গে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে পারবেন না জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনে যুক্ত করার জন্য তাঁর বক্তব্য চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি তার উত্তর দেননি।

কানাডীয় ইমিগ্রেশন নিয়ে কাজ করেন, এমন একাধিক পরামর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেছেন, মাহবুব উল আলম হানিফ ‘ইমিডিয়েট ফ্যামিলি মেম্বার’দের জন্য দেওয়া ছাড়ের আওতায় কানাডা সরকারের অনুমতি পেয়েছেন বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি পেতে হলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাউকে না কাউকে কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আর কূটনীতিক পাসপোর্ট থাকলেও মাহবুব উল আলম হানিফ কানাডায় প্রবেশ করতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা অথবা তাদের নিকটতম সদস্য হতে হবে।